বিদ্যালয়ে গ্রুপ ডি’র কোনও স্থায়ী কর্মী না থাকায়, সেই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দীর্ঘদিন ধরে সম্পূর্ণ বিনা পারিশ্রমিকে পালন করে চলেছেন তিনি। সরকারি ভাবে কোনও নিয়োগ না হলেও, বিদ্যালয়ের প্রতিদিনের ঝাড়পোঁছ, গেট খোলা-বন্ধ, পানীয় জলের ব্যবস্থা, ছোটখাটো দেখভাল — সব কিছুই তিনি নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে করে চলেছেন, যেন এটাই তাঁর নিজের কর্তব্য।
advertisement
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে ভারতের ‘১ টাকার’ মূল্য কত বলুন তো…? চমকে উঠবেন ‘উত্তর’ শুনলেই!
স্বপনবাবুর নিজের কোনও সন্তান নেই। তবে এই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদেরই তিনি নিজের সন্তান মনে করেন। এই আবেগ থেকেই বিদ্যালয়কে তিনি নিজের পরিবার মনে করে বুকে জড়িয়ে রেখেছেন। তাঁর এই মমত্ববোধ আর ভালবাসা শুধু কথা নয়, কর্মেও প্রতিফলিত হয়েছে। তিনি নিজের উপার্জিত অর্থ খরচ করে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নির্মাণ করেছেন তিন জন জাতীয় পুরুষ – নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও স্বামী বিবেকানন্দের পূর্ণ অবয়ব মূর্তি। এই মূর্তিগুলি বিদ্যালয়ের ইতিহাস-চেতনা ও মূল্যবোধকে আরও শক্ত ভিত দিয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘টিটিই’ এবং ‘টিসি’-র মধ্যে পার্থক্য কী বলুন তো…? অধিকাংশই ‘ভুল’ বলছেন, আপনি জানেন?
শিশুদের মনে দেশপ্রেম, সংস্কৃতি ও নৈতিকতা জাগিয়ে তুলতেই তাঁর এই মহৎ উদ্যোগ। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী এবং অভিভাবকদের কাছে স্বপন বাবু শুধুমাত্র একজন সহায়ক নন, তিনি এক অনুপ্রেরণার প্রতীক। তাঁর কাজ ঘিরে বিদ্যালয়ের পরিবেশে এক বিশেষ আবেগ এবং মানবিকতা গড়ে উঠেছে। এলাকার সাধারণ মানুষও স্বপনবাবুর এই উদ্যোগকে গভীর শ্রদ্ধার চোখে দেখেন। অনেকেই বলেন, যখন সমাজের অধিকাংশ মানুষ শুধু নিজের স্বার্থ দেখে, তখন স্বপন চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষরা সমাজে মানবিকতার আলো জ্বালিয়ে রাখেন।
বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও স্বপন চট্টোপাধ্যায়ের এই অবদানকে সম্মান করে আসছে। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি তাঁকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে স্বপনবাবু নিজে কখনই কোনও স্বীকৃতির আশায় কাজ করেননি।
তাঁর মতে, “বিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই আমি যা করি, সেটা আমার নিজের সন্তানের জন্য কিছু করার মতোই।” আজকের সমাজে যেখানে স্বার্থপরতা ও আত্মকেন্দ্রিকতা প্রবলভাবে বিরাজমান, সেখানে স্বপন চ্যাটার্জীর এই নিঃস্বার্থ সেবা এক অনন্য নজির। এমন মানুষ সমাজে যত বেশি থাকবেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ততটাই আলোকিত হবে।
জুলফিকার মোল্যা