দীর্ঘদিন ধরে বসিরহাটের বাগদা, গলদা ও ভেনামি চিংড়ির অন্যতম প্রধান বাজার আমেরিকা। কিন্তু হঠাৎ শুল্ক বৃদ্ধির ফলে রফতানি কার্যত থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি। বসিরহাটের বিভিন্ন আড়ত- মালঞ্চ, ত্রিমোহিনী, হাসনাবাদ, সরবেড়িয়া, ইটিন্ডা, তেঁতুলিয়া ও শাঁড়াপুল থেকে প্রতি সপ্তাহে কয়েকশো কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি হত। দেশের মোট চিংড়ি রফতানির প্রায় ২৫ শতাংশ এখান থেকে আসে। কিন্তু শুল্ক বৃদ্ধির জেরে আমেরিকায় ঠিক দামে চিংড়ি বিক্রি সম্ভব হচ্ছে না। অন্য বাজার ধরতে গেলে আরও সময় ও বিনিয়োগ লাগবে বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।
advertisement
আরও পড়ুনঃ পৃথিবীকে রক্ষাই লক্ষ্য! কাঁথির ‘এই’ শিক্ষক যা করছেন, জানলে স্যালুট করবেন
স্থানীয় এক রফতানিকারক বাবু গাজী বলেন, ‘আমেরিকার দেখাদেখি অন্য দেশগুলিও শুল্ক বাড়ানোর কথা ভাবছে। এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারব কিনা, সেই দুশ্চিন্তা আমাদের গ্রাস করছে’। ইতিমধ্যেই কয়েকজন আমেরিকার চালান স্থগিত করেছেন। তথ্য বলছে, এই সংকটে বসিরহাট উপকূল অঞ্চলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ৫ থেকে ৮ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
আগে রফতানি শুল্ক ছিল ৮.২ শতাংশ। সেটা বেড়ে প্রথমে দাঁড়ায় ২৫ শতাংশে। এরপর ২৭ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে ৫০ শতাংশ শুল্ক। ফলে আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে সম্পূর্ণ শিল্প। শুল্ক বৃদ্ধির কারণে ভারতের অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইকুয়েডরের চিংড়ি রফতানিকারীরা সুবিধা পাবে। সেখানে মাত্র ১৫ শতাংশ শুল্ক থাকায় তাঁরা সহজেই আমেরিকার বাজার দখল করতে চাইবে। অন্যদিকে বসিরহাটের মৎস্যজীবী ও চাষিরা বিদ্যুৎ, খাদ্য, জমিভাড়া ও ঋণ শোধের বাড়তি খরচের বোঝা বইতে গিয়ে আরও সংকটে পড়ছেন।
আরও পড়ুনঃ মাঝরাতে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাঘুরি! যুবককে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে এল আসল গল্প! সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার
অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা জানান, ‘আমাদের চিংড়ির আমেরিকায় চাহিদা রয়েছে। কিন্তু শুল্ক বাড়ায় শুধু আমরা নই, আমেরিকার ক্রেতারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন’। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও বসিরহাট মহকুমা প্রশাসন গত কয়েক বছরে চিংড়ি চাষে উৎসাহ দিয়েছিল। উপকূলবর্তী অল্প নোনা জলের জমি এই ব্যবসার জন্য আদর্শ হওয়ায় বহু মানুষ ঋণ নিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু নতুন শুল্ক নীতির ফলে তাঁদের মধ্যে প্রবল অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এক চাষি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেছি। এখন যদি রফতানির দাম না পাই, তাহলে আমাদের সর্বনাশ ছাড়া কিছুই হবে না’। চিংড়ি রফতানির বিকল্প বাজার খুঁজে না পাওয়া গেলে আগামী দিনে বসিরহাটের অর্থনীতি ও হাজার হাজার পরিবারের জীবিকা গভীর সংকটে পড়বে- এমন আশঙ্কাই এখন প্রধান আলোচনার বিষয়।