২০০৪ সালে বাম আমলে তৎকালীন পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর হাত ধরে বসিরহাট সীমান্ত শহরকে যানজটের হাত থেকে মুক্ত করতে বসিরহাট পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের মাতৃ সদন সংলগ্ন ডাম্পিং গ্রাউন্ড চত্বরে শিলান্যাস করা হয়েছিল একটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাসের। তারপর কেটে গিয়েছে ২১টি বছর আজও অথৈ জলে পড়ে রয়েছে সেই বাস টার্মিনাসের প্রজেক্ট। রাজ্যে পালা বদলের পর কেটে গিয়েছে ১৪টি বছর।
advertisement
আরও পড়ুন: কুলতলির কলেজে সুন্দরবনের মেয়েদের সচেতনতার পাঠ! জানুন শেখান হল কী কী
এই মুহূর্তে উত্তর ২৪ পরগনার শহর বসিরহাটে যে প্রাচীন বাস টার্মিনাসটি রয়েছে সেটি বদরতলায় অবস্থিত। যা শহরের থেকে অনেকটাই বাইরে। সেই বাস টার্মিনাসে ঠাঁই হয়েছে মাত্র দুটি রুটের বাসের। একটি বসিরহাট-বনগাঁ ডিএন ১২। অন্যটি বদরতলা থেকে লেবুখালীগামী বাস। একাধিক সরকারি ও বেসরকারি বাস পরিষেবা ওই বদরতলা বাস টার্মিনাস থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অপর একটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে বসিরহাটের বোটঘাট চত্বরে। যেখান থেকে ২৫৩ রুটের বসিরহাট-ধর্মতলা বাসগুলি চলাচল করে। এর পাশাপাশি বসিরহাটের অধর মার্কেট সংলগ্ন একটি বাসস্ট্যান্ড রয়েছে। যেখান থেকে ধামাখালি গামী ৭২ এ এবং ন্যাজাটগামী ৭২ নম্বর বাসগুলি যাতায়াত করে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
শেষ দুটি বাসস্ট্যান্ড একেবারে শহরের প্রাণকেন্দ্রে হওয়ায় সেখান থেকে বাস যাতায়াত করতে যথেষ্ট সমস্যার মধ্যে পড়ে বাসগুলি। যার জেরে তৈরি হয় ব্যাপক যানজট। তাই ২১ বছর আগে বসিরহাট পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যান নারায়ণ মুখার্জি, উপ পৌর প্রধান চন্দ্রিমা চক্রবর্তী, কাউন্সিলর কৃষ্ণা মজুমদারদের উদ্যোগে অনেক পরিকল্পনা করে মাতৃ সদন সংলগ্ন ওই এলাকায় বাস টার্মিনাস চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। বসিরহাটের এই প্রাচীন শহরের রাস্তাঘাট বড্ড সরু হওয়ার কারণে ছোট বড় যানবাহন চলতে গেলে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হত।
বসিরহাট শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে মহকুমা আদালত, সংশোধনাগার, মহকুমা শাসকের দফতর, রেজিস্ট্রি অফিস, পৌরসভা সহ একাধিক সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। রয়েছে একাধিক হাইস্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়। পাশাপাশি এই রোড দিয়ে যেতে হয় বসিরহাট জেলা হাসপাতাল, বসিরহাট সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল! রয়েছে একাধিক বেসরকারি নার্সিংহোম, ডায়গনস্টিক সেন্টার সহ গুরুত্বপূর্ণ বসিরহাট ইছামতি ব্রিজ। যে ব্রিজের উপর দিয়ে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক আন্তর্জাতিক ঘোজাডাঙ্গা বন্দরে যায়। সেইসব কথা মাথায় রেখে বাস টার্মিনাল করার উদ্যোগ নিয়েছিল তৎকালীন প্রশাসন। তারপর এত বছর কেটে গেলেও বসিরহাট শহরের যানজট মুক্তির বিষয়ে কোনও উন্নয়ন হয়নি। চলতি মাসের ১ তারিখ বসিরহাট পুলিশ জেলার উদ্যোগে শহরকে যানজট মুক্ত করতে ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক চালু করা হয়।
তাতে কী সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধান হবে? একাধিক রুটের গাড়ি বসিরহাটের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ধারে স্ট্যান্ড করে রাখা হয়। জনসংখ্যার থেকেও বেশি পরিমাণে টোটো ও অটো পাল্লা দিয়ে রয়েছে ইঞ্জিনভ্যান ও পা ভ্যান। যার কারণে আরও যানজট সৃষ্টি হয়। তাই বাসিন্দারা চাইছেন বাস টার্মিনাসটি পুরোপুরি ভাবে যাতে চালু করা যায় সেই দিকে নজর দিক প্রশাসক! তাহলে বসিরহাটের যানজট অনেকটাই সুরাহ হবে বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।
এই বিষয়ে তৎকালীন সময়ের উপ পৌর প্রধান চন্দ্রিমা চক্রবর্তী বলেন, “আশা করে বাস টার্মিনাস শিলান্যাস করা হয়েছিল! ভেবেছিলাম পুরোপুরি কমপ্লিট করা যাবে। কিন্তু তারপর যে কী হল সেটা আমি বলতে পারব না। তবে বেশ কিছু কাজ এগিয়ে ছিল।” তিনি চাইছেন প্রাচীন শহর বসিরহাটের যানজট মুক্ত রাখতে বাস টার্মিনালটি তৈরি করা হোক।
বসিরহাট দক্ষিণের বিধায়ক সপ্তর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাম আমলে শিলান্যাস হয়েছিল শুনেছিলাম। কিন্তু তার কোনও অস্তিত্ব আমার জানা নেই। তবে বাস টার্মিনাস একটি তৈরি করা হবে ইটিন্ডা ঘাটে যার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।” তবে সাধারণ মানুষ চাইছেন বসিরহাট শহরকে যানজট মুক্ত করতে একটি টার্মিনাস তৈরি করা হোক। তাহলে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আর দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হবে না এবং অসুস্থ রোগীদের দীর্ঘ সময় জ্যামে আটকে পড়ে আর প্রাণ হারাতে হবে না।