এক সময়ের যৌথ পরিবার এখন ছিন্নমূল, আর তাই জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে ঠাকুমাই যেন হয়ে উঠেছেন এই দুই মেয়ের একমাত্র ভরসা। বাবা মা-র দায়িত্ব পালনে দিদার এমন ভূমিকা দেখলে আপনাদেরও চোখে আসবে জল। জানা গিয়েছে, পূর্ণিমা দেবীর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। এক ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন, আর অপর ছেলে বিয়ে করে অন্যত্র আলাদা থাকেন।
advertisement
মেয়ের বিয়ে হয়েছিল, কিন্তু দুটি কন্যা সন্তান হওয়ার পর মেয়ে ও জামাই তাঁদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন, আর ঠাকুমার কাছে রেখেই চলে যান। সেই সময় মনীষার বয়স দেড় বছর আর মনিকার মাত্র দু’মাস। তখন থেকেই তাঁদের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন দিদা পূর্ণিমা দেবী। অভাবের সংসার। আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করে কোনওরকমে চলে দিন। মাস গেলে যে সামান্য টাকা হাতে আসে, তারও একটা বড় অংশ চলে যায় ঘরভাড়া দিতেই। বাকি টাকায় সারতে হয় খাওয়া, পড়াশোনা – সবই।
দুই নাতনি স্থানীয় বিদ্যালয়ে পড়ে। মনীষা সিক্সে ও মনিকা ফোরে। সকালবেলা অনেক দিন খালি পেটে স্কুলে যেতে হয় তাদের। দুপুরে মিড ডে মিলই তখন একমাত্র পেট ভরানোর খাবার। এই করুণ পরিস্থিতিতেও নাতনিদের কাছছাড়া করতে রাজি নন দিদা পূর্ণিমা দেবী। বলেন, ওরা ছেড়ে চলে গেলে আর বাঁচব না। যতদিন শরীর চলে, এভাবেই লড়াই চালিয়ে যাব। দিদার শরীর খারাপ হলে, কাজে না যেতে পারলে, রোজগার করতে দুই বোন তখন চাল ডাল অর্থ সংগ্রহে বেরোয়।
অত্যন্ত লাজুক প্রকৃতির এই দুই ছাত্রী। ইতিমধ্যেই তাদের এমন করুন অবস্থার কথা সমাজ মাধ্যমে হয় ভাইরাল। বর্তমানে তা দেখেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন এলাকার জনপ্রতিনিধি এবং সমাজসচেতন কয়েকজন মানুষ। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহায়তায় মিলেছে রেশনের সুবিধা। তাদের ভাড়া ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগও দেওয়া হয়েছে বহুদিন পর।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দুই নাতনির পড়াশোনার দায়িত্বও নিয়েছে। স্কুলের তরফে দেওয়া হয়েছে সাইকেল। তবে পূর্ণিমা দেবীর শরীর এখন আর আগের মতো চলে না। তবুও বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা নিয়েই প্রতিদিনের লড়াই। অসহায় এই পরিবারে মেলে না সরকারি তেমন কোন সাহায্য। পূর্ণিমা দেবীর আবেদন, যদি কেউ একটু সেভাবে পাশে এসে দাঁড়ায়, তাহলে নাতনিদের একটু ভাল ভাবে মানুষ করতে পারতেন তিনি। তবে দিদা ও নাতনিদের জীবনের এমন কঠিন লড়াই, যেন আগামীর সমাজকে অনেক বড় বার্তা দিচ্ছে মনে করছে নাগরিক সমাজ।
Rudra Narayan Roy