হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর উদ্যোগে এই অভিযান পরিচালিত হয়। ষোল বছর পর এত বড় মাপের অভিযান আয়োজন করল সংস্থাটি। চার সদস্যের এই দলটি গত ৩১ জুলাই রাতে শিলিগুড়ি থেকে যাত্রা শুরু করে। ট্রেনে দিল্লি, সেখান থেকে বাসে মানালি হয়ে অবশেষে পৌঁছন লাদাখে। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ ও কষ্টকর ট্রেকিং। প্রচণ্ড ঠান্ডা, অপ্রতুল অক্সিজেন, অনিশ্চিত আবহাওয়া এবং দুর্গম পথ, সব মিলিয়ে এই যাত্রা সহজ ছিল না।
advertisement
অভিযাত্রী কল্যাণ দেব বলেন, “অচেনা শৃঙ্গে ওঠার মানেই হল অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই। কী ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতে পারে আগে থেকে বোঝা যায় না। সেটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”
অভিযানের পথে বহুবার বাধার মুখে পড়তে হয়েছে দলকে। কখনও ঝড়-বৃষ্টি, কখনও পাহাড়ি ধসে আটকে যাওয়া, কখনও আবার জলাভাব। বিশেষত শৃঙ্গজয়ের দিন তীব্র জলাভাবই হয়ে উঠেছিল বড় বাধা। কিন্তু অভিজ্ঞতার জোরে ও মানসিক দৃঢ়তায় তাঁরা সেইসব বাধা অতিক্রম করেন। অবশেষে ৯ আগস্ট সকাল থেকে শুরু হওয়া টানা প্রায় ১২ ঘণ্টার প্রচেষ্টার পর জয় হয় দুটি শৃঙ্গের। চূড়ায় দাঁড়িয়ে চার অভিযাত্রী প্রথম দেখেন মেঘের সমুদ্রের ওপরে বিস্তৃত সেই অনাবিষ্কৃত ভূমি।
আরও পড়ুন- বর্ধমানে মিলছে ‘ন্যানো’! ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে দোকানদার, দাম কত জানেন
অভিযাত্রী গণেশ সাহা জানিয়েছেন, “ফিরে আসার সময়ও আমাদের বিপদ পিছু ছাড়েনি। পাহাড়ি ধসে আটকে থাকতে হয়েছিল প্রায় ৩৬ ঘণ্টা। তবে জয় নিশ্চিত হয়েছিল বলেই মনোবল হারাইনি।” প্রথমবার শৃঙ্গ অভিযানে অংশ নিয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেন কাজল কুমার দত্ত। তাঁর কথায়, “এই জয় শুধু একটি সাফল্য নয়, এটি আমার জীবনের নতুন অধ্যায়। ভবিষ্যতে আরও বড় অভিযানে যাওয়ার সাহস জোগাবে।”
এই অভিযানের পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিল হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশন (ন্যাফ)-এর। সংস্থার অনিমেষ বসু বলেন, “এই শৃঙ্গ জয় আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের খবর। তবে একটি বিষয় স্পষ্ট, এ ধরনের অভিযান অনেক ব্যয়বহুল। নতুন প্রজন্ম অনেক সময় খরচের কারণে পিছিয়ে যায়। তবুও এবারের সাফল্য ভবিষ্যতের অভিযাত্রীদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।”
লাদাখের পুগা ভ্যালির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা এই দুটি শৃঙ্গ এখন থেকে ইতিহাসের অংশ। বাংলার চার পর্বতারোহীর পদচিহ্নে সেখানে লেখা হলো সাহস ও সাফল্যের নতুন কাব্য।