TRENDING:

একসময়ে বোমা-বারুদ-রাজনৈতিক হানাহানির আঁতুড়ঘর নানুরে আজ শান্তির হাওয়া , জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারাই

Last Updated:
impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
#নানুর: ২০০০ সাল! রক্তের বন্যা বয়েছিল বীরভূমের নানুরের সুচপুরে। জমি দখলকে কেন্দ্র করে খুন হন ১১ জন তৃণমূল সমর্থক খেতমজুর। খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৮১ জন সিপিএম নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
advertisement

নানুরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বৈষ্ণব কবি চণ্ডীদাসের নাম। অথচ সেই জনপদের পরিচিতিই একসময়ে ছিল বীরভূমে বোমা-বারুদ-রাজনৈতিক হানাহানির আঁতুড়ঘর হিসেবে! বছর ১৪ আগেও ‘লাল দুর্গ’ হিসেবেই পরিচিত ছিল নানুর। এলাকা দখলকে ঘিরে তখন বামেদের শরিকি সংঘর্ষে (কখনও সিপিএম-ফরওয়ার্ড ব্লক, কখনও সিপিএম-আরএসপি) বারবার তেতে উঠেছে নানুরের জমি। সূচপুর, পাপুড়ি, থুপসড়া, সাকুলিপুর— হানাহানির মুক্তাঞ্চলের তালিকাটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে। গ্রাম দখল ও বিশ্বাসঘাতকতার এই দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে বাড়ি পোড়ানো, লুঠপাট, বোমাবাজি, গুলি কিছুই বাদ যায়নি। লোকসভা থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত— নানুরে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল সিপিএমের। কয়েকটি মাত্র পঞ্চায়েতে ছিল শরিক দলের প্রভাব। ওই সব পঞ্চায়েতের দখল নিয়েই সিপিএমের সঙ্গে শরিকদের সংঘর্ষে দিনের পর দিন অশান্ত হয়ে উঠত নানুরের একের পর এক গ্রাম। তখন দাসকলগ্রাম, কড়েয়া ১ ও ২ পঞ্চায়েতে প্রভাব ছিল ফরওয়ার্ড ব্লকের। ওই দলের দুই দাপুটে নেতা অভিজিৎ ওরফে রানা সিংহ (বর্তমানে তৃণমূলে) এবং তাঁরই সম্পর্কিত ভাই বিশ্বজিৎ ওরফে কর্পূরের দাপটে ওই দুই পঞ্চায়েত এলাকায় সিপিএম দীর্ঘদিন কোণঠাসা ছিল। শুধু এই সব জায়গাই নয়, নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে দাসকল, পাটনীল, পলশা প্রভৃতি গ্রামেও ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গে ধারাবাহিক সংঘর্ষে জড়িয়েছে সিপিএম। দু’দলের নেতা-কর্মী-সমর্থক তো বটেই, প্রাণ গিয়েছে একাধিক নিরীহ গ্রামবাসীর। দিনের পর দিন গ্রামছাড়া হয়েও থাকতে হয়েছে বহু পরিবারকে। একই ভাবে গ্রাম দখলকে কেন্দ্র করে আর শরিক আরএসপি-র সঙ্গে সিপিএমের সংঘাত বেঁধেছে বড়া-সাওতা, জলুন্দি, নওয়ানগর-কড্ডা প্রভৃতি পঞ্চায়েত এলাকায়।

advertisement

সময় এগিয়েছে! নানুর গণহত্যার পর কেটে গিয়েছে ১৯টা বছর! একসময় যে নানুর ছিল 'আতঙ্ক'র আরেক নাম, এখন কেমন আছে সেই নানুর ? কেমন আছেন নানুরের বাসিন্দারা ? প্রশ্নের উত্তরে পেতে গন্তব্য নানুরেই!

বাসাপাড়া বাসস্ট্যান্ড! বাজার এলাকা! কাচা সবজি, ফলের বাজার থেকে সারি দিয়ে পাকা দোকান ঘর! চায়ের দোকানে বেশ বড়সর একটা জটলা! কলেজপড়ুয়া থেকে বৃদ্ধ... রয়েছেন সব বয়সের মানুষই!

advertisement

''আপনারা এখন কেমন আছেন?''

'' খুব ভাল! শান্তিতে... '

সবার গলায় এক সুর, '' বামফ্রন্ট আমলে সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চলত। রাস্তাঘাটে এক ফুট কাদা! তৃণমূল সরকার আসার পর চারদিকে শুধুই উন্নয়ন! রাস্তাঘাট ঝকঝকে, তকতকে। ছাত্রীরা পাচ্ছেন কন্যাশ্রী, রূপশ্রী। ছাত্রদের মিলছে যুবশ্রী, শিক্ষাশ্রী। সাধারণ মানুষ খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, সমব্যথীর মতো সরকারের শুরু করা ৭৩-টা প্রকল্পর সুবিধা পাচ্ছেন। ''

advertisement

চেঁচিয়ে উঠলেন এক বৃদ্ধ, '' বাম আমলে প্রচুর বোমা ফেটেছে। নানুরে এখন একটা বোমারও আওয়াজ পাবেন না! ''

নানুরের মানুষ আশাবাদী, পশ্চিমবঙ্গে ৪২টা আসনে ৪২টাই পাবে তৃণমূল। তাঁদের ইচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর পদে আসুক, তাঁদের মিলীত স্লোগান, ''২০১৯ বিজেপি ফিনিশ''!

নানুর গণহত্যায় মৃতদের স্মৃতিতে বাসাপাড়া বাসস্ট্যান্ড অঞ্চলে শহিদ বেদি নির্মাণ করেছে তৃণমূল সরকার। প্রতি বছর ২৭ জুলাই সেখানে শহিদ দিবস পালন করে তৃণমূল নেতৃত্ব।

advertisement

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
লালগোলাতে রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন মা কালী! দেওয়া হয় ইলিশের ভোগ
আরও দেখুন

রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় করা সুচপুর গণহত্যাকে সামনে রেখে সহানুভূতির হাওয়া পালে লাগিয়ে জেলায় তৃণমূল পথ চলা শুরু করে। ২০০৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে লালদুর্গ হিসেবে খ্যাত নানুরের দু’টি পঞ্চায়েতেও ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল, কংগ্রেস ও বিজেপি জোট। নানুরে যে একেবারে তৃণমূলের কোনও ভিত্তি ছিল না, তা নয়। তলায় তলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের প্রতি নানুরের বিভিন্ন এলাকায় সমর্থনের একটা চোরাস্রোত ছিলই! বিভিন্ন সময়ে নানুরের বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে পারলেও তৃণমূল নওয়ানগরকড্ডা পঞ্চায়েত এলাকা বিশেষ করে খুজুটি পাড়া ছিল সিপিএমের ‘শক্তঘাঁটি’। দলের প্রভাবশালী নেতা নিত্যনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি খুজুটিপাড়া গ্রামে। খুজুটিপাড়ায় পার্টি অফিস থেকে নিত্যবাবুর নেতৃত্বেই নানুরের বিভিন্ন এলাকায় সিপিএমের সাংগঠনিক কর্মসূচি পরিচালিত হত। হাওয়াটা ঘুরতে শুরু করে ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে। সে বার নানুর বিধানসভা এলাকায় সিপিএমের ভোটে ভাল রকম থাবা বসায় তৃণমূল। তার উপরে বিভিন্ন সময় সিপিএমের বিভিন্ন শরিক দলের নেতা-কর্মীরাও নাম লেখাতে শুরু করেন তৃণমূলে। হাওয়াটা পুরোপুরি ঘুরতে শুরু করে ২০১০-এর নভেম্বর মাস থেকে। ওই সময় সুচপুর গণহত্যায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন সাজা পেয়ে নিত্যবাবু-সহ ৪৪ জন নেতাকর্মী জেলে। ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে নানুর কেন্দ্রটিও সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। বামেদের মেরুদণ্ড এমনই ভেঙে দিয়েছিল তৃণমূল যে ২০১৪ পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের একটি আসনে ছাড়া গোটা এলাকায় কোথাও কোনও প্রার্থীই দিতে পারেনি বামেরা। গত লোকসভা ভোটেও সেই ধারা অব্যাহত থেকেছে। শুধু নানুর বিধানসভা থেকেই ৬০ হাজারেরও বেশি লিড পেয়েছিল তৃণমূল। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগেও নানুরবাসীদের বক্তব্য, ''এখানে শুধুই তৃণমূল''!

বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
একসময়ে বোমা-বারুদ-রাজনৈতিক হানাহানির আঁতুড়ঘর নানুরে আজ শান্তির হাওয়া , জানালেন স্থানীয় বাসিন্দারাই