মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন শহরে একসময় দেখা যেত ৬০-৭০টি রিকশা, তা এখন গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৪-৫টি। আগে দৈনন্দিন গড়ে ৫০০ টাকার বেশি রোজগার হলেও এখন ১০০ টাকা রোজগার হয় না ঠিক মতো। মানুষের সময় কমেছে, দ্রুত গন্তব্যে যাওয়ার জন্য ব্যাটারি চালিত তিনচাকায় ভরসা বেশি করছে। আর এই জাঁতাকলে পড়ে হারিয়ে যাচ্ছে পায়ে টানা রিকশা।
advertisement
এক একটি স্ট্যান্ডে খুঁজলে এখন ৪-৫টির বেশি দেখা যায় না পায়ে টানা রিকশা। যানটিকে ব্যাটারি চালিত করতে গেলে যে খরচ তা বহন করতে হবে তা অনেকেই পারে না। অগত্যা ভাড়া না হলেও তিনচাকা রিকশা আগলেই বসে থাকতে হয় দিনভর। আগের মতো আর সেই কদর নেই তাদের। ফলে একপ্রকার অবলুপ্তির পথেই পায়ে টানা রিকশা। রাস্তায় আর দেখা মেলে না সেভাবে। এককালে এই রিকশাই ছিল আভিজাত্য প্রদর্শনের অন্যতম নিদর্শন। কিন্তু আজ যেন অতীতের সব আভিজাত্যই হারিয়েছে এই পায়ে টানা রিকশা। আর তার জায়গা নিয়েছে মোটর চালিত বা ই-রিকশা। ফলে পায়ে টানা রিকশার পেশা বদলে আজ অনেকেই চালাচ্ছেন টোটো বা মোটর ভ্যান।
জঙ্গিপুর থেকে লালবাগ শহরের নানা প্রান্তের পাশাপাশি স্টেশন চত্বরে সারিবদ্ধ ভাবে দেখা মিলত এই রিকশার। যা বর্তমানে হারিয়ে গিয়েছেই বলা চলে। হাতে গোণা মাত্র কয়েকটি পায়ে টানা রিকশার দেখা মেলে। চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুধু টাকার জন্য নয়, প্রযুক্তির যুগে ই-রিকশার দৌরাত্ম্যর মাঝেও, রীতিমতো ঐতিহ্য ধরে রাখতেই প্রবীণ এই মানুষেরা এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন পায়ে টানা রিকশা। এই রিকশা চালানো যথেষ্টই কষ্টসাধ্য। পায়ের পেশী শক্তির বেশ অনেকটাই জোর লাগে চালাতে। দু’জন, বা শিশু-সহ তিনজনের বেশি যাত্রী বহন করা যায় না এই রিকশায়।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
স্টেশন চত্ত্বরের বাইরে করুণ দৃষ্টিতে যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন আর আগের মতো সাড়া মেলে না। দ্রুতগতির জীবনে আজ যেন সবাই ছুটছে। তাই সময় বাঁচাতে সকলেই ভরসা করছে ই-রিকশার উপর। ফলে যেন কোথাও ম্লান হয়ে গিয়েছে পায়ে টানা রিকশর আভিজাত্য। আগে যে রিকশায় চড়লে বাবুগিরি ফলানো যেত, এখন সেই রিকশায় উঠলে রীতিমতো খিল্লি জোটে। তাই অনেকেই এড়িয়ে চলেন এই পায়ে টানা রিকশা। তবে বহু প্রবীণ মানুষ এখনও ভরসা রাখেন এই পায়ে টানা রিকশার উপরই। তাই সারাদিনে দু-তিনশো টাকা রোজগার হয় মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ডের বাইরে দাঁড়ানো হাতে গোনা এই পায়ে টানা রিকশাচালকদের। আর এভাবেই তারা টিকিয়ে রেখেছেন ঐতিহ্যের এই তিন চাকাকে।





