বিজেপিতে যোগ দেওয়া ইস্তক রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত দলের হয়ে কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছিলেন শুভেন্দু। কিন্তু গত ১৮ জানুয়ারি নন্দীগ্রামে সভা করতে গিয়ে ওই আসন থেকে নিজে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেন মমতা। 'খেলা' ঘুরে যায় তখনই। শুভেন্দুর নাম তখনও ওই কেন্দ্রে বিজেপি ঘোষণা না করলেও প্রেস্টিজ ফাইটের কারণে অধিকারী পরিবারের সদস্যকে নন্দীগ্রামেই প্রার্থী করতে হত বিজেপিকে। বাস্তবে হয়েছেও তাই। কিন্তু নিজের কেন্দ্রে নজর দিতে গিয়ে শুভেন্দু প্রায় আটকে গিয়েছেন নন্দীগ্রাম তথা পূর্ব মেদিনীপুরেই। মমতা যখন আহত হওয়ার পর থেকে এখনও নন্দীগ্রামমুখো হননি, তখন শুভেন্দু শুধু সোমবারই ৯টি সভা করবেন নন্দীগ্রামে।
advertisement
ইতিমধ্যেই সেই কর্মসূচি শুরু হয়ে গিয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে দশটায় ভেকুটিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে যে কর্মসূচির শুরু তা রাত সাড়ে আটটায় শেষ হবে নন্দীগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত। অর্থাৎ, প্রায় ঠাসা কর্মসূচি রয়েছে শিশির পুত্রের। গতকালই অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দুর বাবা, তৃণমূল সাংসদ শিশির অধিকারী। আগেই জানিয়েছিলেন, ছেলের হয়ে প্রচারেও যাবেন। তবে, তা সোমবার থেকেই শুরু কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়।
অপরদিকে, তৃণমূল সূত্রের দাবি করা হয়েছে নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিকে ঝড় তুলবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ২৯ ও ৩০ শে মার্চ নন্দীগ্রামে থেকে একাধিক সভা মিছিল করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অন্তত এমনটাই তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু খোদ মমতা জানিয়েছেন, দোলের দিন বিকেল অর্থাৎ ২৮ মার্চ বিকেল থেকে নন্দীগ্রামেই থাকবেন তিনি। সম্প্রতি খেজুরির জনসভা থেকেই মমতা বলেন, "দোলের দিন বিকেল থেকেই আমি নন্দীগ্রামে থাকব।"
মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার দিনই নন্দীগ্রামে আহত হয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। সেই ঘটনা নিয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে শুরু করে রাজ্য প্রশাসন তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দিলেও তৃণমূল নেত্রী অবশ্য এখনও চক্রান্তের তত্ত্বেই অনড়। তারপর থেকেই প্রত্যেকটির জনসভা থেকেই নন্দীগ্রামে তাঁকে যে আঘাত করা হয়েছে, তা নিয়ে অভিযোগ করেছেন তিনি। শুধু তাই নয় পূর্ব মেদিনীপুরের একাধিক জনসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে কার্যত টার্গেট করে একের পর এক অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু তাঁর সব নজরে শুধুই নন্দীগ্রাম নেই, আছে গোটা বাংলা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, শুভেন্দু আগে নিজের কেন্দ্রেই জয় নিশ্চিত করতে চাইবেন। তাই এই মুহূর্তে নন্দীগ্রাম ও সংলগ্ন এলাকা ছেড়ে তাঁর পক্ষে বেরোনো সম্ভব নয়। সেইসঙ্গে নন্দীগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে তাঁকে। যা রীতিমতো বিড়ম্বনার। তাই আপাতত নিজের কেন্দ্রের জনসংযোগেই নজর দিতে হচ্ছে শুভেন্দুকে। কিন্তু মমতার ক্ষেত্রে তা সম্ভব নয়। তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনতে তিনিই একমাত্র মুখ। তাই মমতার হুইল চেয়ার যখন ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলার কোণায়-কোণায়, শুভেন্দুর নজরে কেবলই নন্দীগ্রাম।