শান্তিকুঞ্জের লম্বা লাল-হলুদ সিঁড়ি দিয়ে উঠে বাঁ হাতের ঘরে তিনি দিব্যি ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছেন৷ যদিও শান্তিকুঞ্জের পাতলা লোহার গেট খুলে ঢুকে পড়া সহজ। কিন্তু মেজো ছেলের জন্য মোতায়েন হওয়া কালাশনিকভ হাতে বসে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের নজর এড়িয়ে মার্বেলের মসৃণ মেঝেতে পা রাখা ঠিক ততটাই কঠিন। তবে তিনি চাইলে সব পারেন। আর পারেন বলেই না তিনি শিশির অধিকারী।
advertisement
অধিকারী পরিবার। রাজনৈতিক ভাবে যে পরিবারের হাতে এতদিন ঘাসের উপর জোড়াফুল যত্ন করে পালন করার ভার ছিল। কাঁথির সাংসদ বলছেন, "আমরা বেইমান নই। তাই তৃণমূল গঠনের পরে আমরা যখন দলে যোগ দিই তখন দলকে সমৃদ্ধ করেছি।" কে বলবে, এই পরিবারের বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস গদ্দার, মীরজাফর লাগাতার যে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
উত্তর দেওয়ার আগে শিশিরবাবু একবার দেখে নিলেন তার মাথার উপরে দেওয়ালে ঝোলানো একটা সাদা-কালো ছবির দিকে। শান্তিকুঞ্জের মেজো ছেলের ছবি৷ যিনি তাকিয়ে আছেন তাঁর বাবার দিকেই। তার বাবার সহজ উত্তর, "আমরা মেদিনীপুরের লোক। আমাদের একটা আত্মসম্মান আছে। আমরা কারও সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করি না। আমরা গদ্দার নই। সেটা দিদিমণি ভালো করেই জানেন।"
কথার ফাঁকে অবশ্য অতিথি আপায়্যন করতে ভুলছেন না ৬৩ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রথম জেতা ব্যক্তিটি। কাঁথির শান্তিকুঞ্জের সামনে বরাবর দেখা যেত ভোটের আগে তৃণমূলের বুথ অফিস বসত। যে জায়গায় বসত, এবার সেই জায়গায় বিজেপির বুথ অফিস করা হয়েছে। যেখানে মাঝে মধ্যেই নজরদারি চালাচ্ছেন শান্তিকুঞ্জের ছোট ছেলে সৌমেন্দু। মাঝে মধ্যেই সেই বুথ অফিস থেকে হালকা আওয়াজ ভেসে আসছে জয় শ্রীরাম বলে। এমন চিত্র এ-পাড়া আগে দেখেনি। দীর্ঘদিন পরে এমন একটা নির্বাচন হচ্ছে যেখানে গোটা দেশের নজর এই শান্তিকুঞ্জের উপর। আর সেই বাড়ির রাজনীতিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ মানুষটি এবার প্রচারে বেরোলেন না।
তবে তিনি জানালেন, "যা কাজ করার আমি ফোনে ফোনে করছি।" করোনার আবহে বাড়ি থেকে বেরনোয় রাশ টেনেছেন তিনি। তা বলে বাইরের জগতের সঙ্গে তার যোগাযোগ নেই এটা বলা ভুল হবে। নিজেই বলছেন, গত কয়েকদিন ধরে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাছে কে খাবার পাঠাচ্ছে। কার কাছ থেকে মাংস নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কোন বুথে কোন এজেন্ট বসেছে। কে ঘর থেকে বেরোয়নি। ভোটের সাড়ে তিন ঘন্টার ঝোড়ো ইনিংসের পরে জানালেন, সব আসনেই পদ্ম ফুটবে।
তাঁর কথায়, "আসলে আমার মেজোকে মা-বোনেরা ভালোবাসে। ওরাই জেতাবে।" বাইরে থেকে সবার নজর লাল হলুদ সিঁড়ির বাঁ পাশে থাকা ঘরে কী হচ্ছে। আর ঘরে বসে থাকা মানু্ষটি বলে দিচ্ছে বাইরে কী হচ্ছে।
Abir Ghoshal
