২০০৭ সালে ১৪ মার্চ ভাঙাবেরিয়া সেতু ও অধিকারীপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৪ জন স্থানীয় মানুষ । ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতৃত্বে নিজেদের জমি রক্ষায় সরাসরি শাসকের রক্তচক্ষুর মোকাবিলা করেছিল নন্দীগ্রাম । ১৪ মার্চের হিংসার পর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ ১২ বছর , বদলে গিয়েছে শাসকদল, পরিবর্তিত হয়েছে একাধিক রাজনৈতিক সমীকরণ । তবে এক দশক পর বুলেটের ক্ষতচিহ্ন ম্লান হয়ে গেলেও সেই স্মৃতি আজও প্রকট নন্দীগ্রামের মানুষের মনে ।
advertisement
১৪ মার্চ সকালবেলা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের আওয়াজে ঘুম ভাঙে মঞ্জু মান্নার । ভাঙাবেরিয়া সেতুতে ৩ জন গুলিবিদ্ধ যুবককে সাহায্য করার সময় পুলিশের গুলি ধেয়ে এসেছিল মঞ্জু মান্নার দিকে । তমলুক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে । চিকিৎসার জন্য উচ্ছেদ কমিটির তরফ থেকে ৩০,০০০ টাকা অর্থসাহায্য দেওয়া হলেও ক্ষতিপূরণ ও সহায়তা বাবদ কোনও টাকা-পয়সা পৌঁছায়নি তাঁর কাছে । সরকারের তরফ থেকে দেওয়া ১ লক্ষ টাকাও তাঁর কাছে আসেনি ।
১৪ মার্চের আন্দোলনের অংশ নিয়েছিলেন নকুল মণ্ডলও। ভাঙাবেরিয়া ব্রিজে পুলিশের গুলিতে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায় তাঁর একটি কিডনি । চিকিৎসা চলাকালীন বাদ দেওয়া হয় সেই কিডনিটি। তারপর সেই অবস্থাতেই বেঁচে রয়েছেন তিনি । সময়ের সঙ্গে সব ক্ষতচিহ্ন ম্লান হলেও নিজের এই ক্ষতি ভুলতে পারেন না নকুল মণ্ডল । তাঁর এই ক্ষতির সময় কোনও প্রশাসনিক সহায়তাও তিনি পাননি, স্পষ্ট জানিয়েছেন তিনি ।
নন্দীগ্রামের অলিগলিতে রয়েছেন এমন আরও অনেক নকুল মণ্ডল, মঞ্জু মান্নারা। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের নাম উচ্চারিত হলেই কৃষি বনাম শিল্প তরজার প্রসঙ্গ অবশ্যম্ভাবী কিন্তু নন্দীগ্রামের মানুষ আজও চান সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে- এটাই তাঁদের প্রাথমিক চাহিদা । আজ এক দশকের বেশি সময় কেটে গেলেও তাঁদের জীবনযাত্রার উন্নতি হয়নি । 'আমার অবস্থা তো যে কে সেই রয়েছে,' হাসিমুখেই জানালেন মঞ্জুদেবী ।
ভোট আসে, ভোট যায়। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় উৎসবে সামিল হন সাধারণ মানুষ । ষষ্ঠ দফা ভোটের আগে নন্দীগ্রামের মানুষ নতুন করে বেঁচে থাকার ইচ্ছেই প্রকাশ করলেন । সপ্তদশ লোকসভা ঘিরে তাঁদের প্রত্যাশা একটাই- তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই পূর্ণতা পাক; কারণ নন্দীগ্রামের পরিচয় হতাশায় নয়, নন্দীগ্রামের পরিচয় সেই লড়াইয়ে যা আজও লড়ছেন সেখানকার মানুষরা । সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে তাই তাঁরা চান ক্ষমতায় যেই আসুক, তাঁদের প্রাথমিক চাহিদাগুলি মিটিয়ে দেওয়া হোক । নতুন সরকার ঐতিহাসিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত সেই মানুষগুলিকে অগ্রাধিকার দিক, একটু ভালভাবে বাঁচতে চান মঞ্জুদেবীরা ।