খোঁড়া বাদশা হলুদ হাফ শার্ট ও লুঙ্গি পরে আদালত কক্ষে বসে ছিল। এদিন আদালতের কাছে খোঁড়া বাদশা জানায়, তিনি প্রতিবন্ধী গত ত্রিশ ধরে। শারীরিকভাবে অসুস্থ। বাইশ বছরের মেয়ে আছে অবিবাহিতা, ও ৩ ছেলে আছে। বলতে বলতে সে কান্নায় ভেঙে পরে। বিচারক এরপর তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রশ্ন করেন, "এত নিরীহ মানুষের প্রাণ গেল কী বলবেন? বিকলাঙ্গ, পঙ্গু হল যে, তাঁদেরও তো কেউ ছিল না?"
advertisement
আদালতের কাছে খোঁড়া বাদশা জানায়, সে ব্যবসা করত না, জামাই নামে একজন কেউ ব্যবসা করত। ফের কান্নায় ভেঙে পরে সে। বার বার চোখ মুছতে থাকে কমলা রঙের রুমাল দিয়ে। এরপর আদালত কক্ষে বেঞ্চে গিয়ে ফের বসে খোঁড়া বাদশা। সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায় ও শান্তনু দত্ত আদালতের কাছে আবেদন করেন, বিরল থেকে বিরলতম ঘটনা। এই মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। অভিযুক্তর আইনজীবী রাম পদ জানা পাল্টা দাবি করেন, "১৭২ জনের মৃত্যু বলা হচ্ছে সেটা উস্থি মগরাহাট সব মিলিয়ে। মোট ৬৯ জনের মৃত্যু হয় মগরাহাটকাণ্ডে।" একইসঙ্গে তিনি বলেন, খোঁড়া বাদশা প্রতিবন্ধী, ৪সন্তান রয়েছে তাঁর। কাজ কর্ম নেই ছেলেদের। এই বিষয়গুলি বিবেচনা করে দেখার জন্য আবেদন আবেদন জানান আইনজীবী।
পাল্টা সরকারি আইনজীবী দাবি করেন, অকাট্য প্রমান রয়েছে সেই ভিত্তিতেই রায় হবে। এখানে 'সেন্টিমেন্ট'এর ব্যাপার নেই। দুপক্ষের সওয়াল জবাব শুনে কিছুক্ষণ পর রায় দেন বিচারক।মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ড বা আমৃত্যু যাবজ্জীবনের সাজা শোনায় আদালত। সিআইডি তদন্তকারী অফিসার শিমুল সরকার জানান, আদালতের রায়ে সিআইডি টিম খুশি। এধরণের অপরাধ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি যেন হয় তার দৃষ্টান্ত গড়ল এই রায় ।
প্রসঙ্গত, ঘটনাটি ঘটে 2011 সালে 13 ডিসেম্বর। মগরাহাট ও উস্থি ও মন্দিরবাজার এলাকায় বিষ মদ খেয়ে ১৭২ জনের মৃত্যু হয়, ৩৭৫ জন অসুস্থ হয়ে পরে। সেই ঘটনায় উস্থি ও মগরাহাটের মামলা সিআইডি তদন্ত ভার হাতে নেয়। ১৪ ডিসেম্বর 2011 সালে মুজিবর রহমান অভিযোগ করেন তার দাদার মৃত্যু ঘটনায়। সেই ঘটনায় 2012 সালে ফেব্রুয়ারি মাসে চার্জশিট দেয় সিআইডি। পরে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দেয়। 2018 সালে উস্থি মামলায় খোঁড়া বাদশা-সহ চার জনের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণা হয়। এবার মগরাহাট মামলায় বাকিদের বেকসুর খালাস হলেও মূল অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশাকে শনিবার দোষী সাবস্ত্য করে আদালত।