আর্টিফিশিয়াল লাইটের তরঙ্গ সমূহ ক্ষতি ডেকে আনছে পরিবেশ ও মানব শরীরের। সমগ্র প্রাণিজগতের কাছে এলইডি লাইট হয়ে উঠছে 'সাইলেন্ট কিলার'। আর্টিফিশিয়াল লাইট নিয়ে গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। এমনটাই জানিয়েছেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানিমেল সায়েন্স বিভাগের প্রধান অসমঞ্জ চট্টরাজ। ২০১২ সাল থেকে জার্মানির সঙ্গে সংযুক্ত ভাবে আর্টিফিশিয়াল লাইটের ওপর এই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
advertisement
উল্লেখ্য, কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালে যোগ দেন অসমঞ্জ চট্টরাজ। তার আগে মণিপুরের ইম্ফলে তিনি আলো নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য আলো যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ অন্ধকার। কারণ মানব শরীর থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রাণী জগৎ, জীবন চক্র চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আলো এবং অন্ধকারের সমান প্রয়োজন। মানব শরীরে এমন কিছু হরমোন রয়েছে, যা রাতে কাজ করে। আবার উদ্ভিদ যে খাদ্য উৎপাদন করে, তার মূল উপাদান গ্লুকোজ। কিন্তু অন্ধকারের অভাবে উদ্ভিদের গ্লুকোজ উৎপাদনের মাত্রা কমে যাচ্ছে। তাছাড়াও মানব শরীর থেকে অন্য প্রাণীর শরীরে বিভিন্ন হরমোনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
আরও পড়ুন: শিনা বোরা হত্যাকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টে জামিন মা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের
গবেষক অসমঞ্জ চট্টরাজ এই বিষয়টি নিয়ে জানিয়েছেন, আলোর সাতটি রঙ রয়েছে। তার লাল গোত্রীয় রংগুলির ভেদন ক্ষমতা কম। আবার নীল জাতীয় রংগুলির ভেদন ক্ষমতা অনেক বেশি। আর বর্তমানে যে আধুনিক এলইডি লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে, তা দেখতে সাদা মনে হলেও আসলে উজ্জ্বল নীল রঙের। সেই আলোর প্রভাবে মানব শরীরের বিভিন্ন হরমোনজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। নিশাচর প্রাণীগুলির অস্তিত্বের লড়াই আরও কঠিন হচ্ছে। উদ্ভিদজগতের নৈশ যে প্রক্রিয়া রয়েছে, তা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ধীরে ধীরে এই এলইডি আলো আরও বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠছে। তিনি বলেছেন, এলইডির ব্যবহার যত বাড়বে, ততই এই ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
অ্যানিমাল সাইন্স এর এই অধ্যাপক আরও বলেছেন, এখনও পর্যন্ত আর্টিফিশিয়াল লাইটের ব্যবহার দূষণের পর্যায়ে পড়ে না। যদিও এলইডি আলোর ব্যবহারের ওপর গবেষণার সমস্ত রিপোর্ট দেখে বেশ কিছু দেশের সরকারি-বেসরকারি কিছু ক্ষেত্রের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্য চিন্তা ভাবনা চালাচ্ছে। আইন প্রণয়নের চেষ্টাও করছে। উল্লেখ্য ২০১২ সাল থেকে আর্টিফিশিয়াল লাইট নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন এই অধ্যাপক। এই বিষয়ে বেশ কয়েকটি জার্নালও ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাবা মুম্বইয়ের ফুল বিক্রেতা, ক্যালিফোর্নিয়ার ইউনিভার্সিটিতে কী করবেন মেয়ে! জানুন
অসমঞ্জ চট্টরাজ জেব্রা ফিসের ওপর এই গবেষণা চালিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, জেব্রা ফিসের সঙ্গে মানব শরীরের অনেকখানি মিল পাওয়া যায়। তাছাড়াও জলের মধ্যে আলোর তরঙ্গ কম কাজ করে। এই দুটি বিষয়ের জন্য তিনি জেব্রা ফিসকে বেছে নিয়েছিলেন গবেষণার জন্য। কিন্তু সেক্ষেত্রেও এলইডি লাইটের ক্ষতিকর প্রভাব দেখা গিয়েছে। এমনটাই দাবি করেছেন তিনি। বলছেন, আর্টিফিশিয়াল লাইটের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে মানুষের খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ অনেকখানি বেড়ে যাচ্ছে। ফলে স্থূলতার আধিক্য দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়।
অধ্যাপক অসমঞ্জ চট্টরাজ বলছেন, এই এলইডি লাইটের ওপর যত দ্রুত সম্ভব নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারলে আগামী দিনে বিপদ আরও বাড়বে। এই উজ্জ্বল আলোর মুখোশে ধীরে ধীরে গ্রাস করবে অন্ধকার ভবিষ্যৎ। তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র এলইডি উজ্জ্বল স্ট্রিটলাইট নয়, বাড়িতে ব্যবহৃত বিভিন্ন এলইডি লাইট, মোবাইলের স্ক্রীন, ল্যাপটপ স্ক্রীন, টেলিভিশন, সব জায়গাতেই এলইডির অত্যধিক ব্যবহার বিপদ বাড়িয়ে তুলছে। তাই তিনি মনে করছেন, এলইডি আলোর ব্যবহারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। পাশাপাশি এলইডি লাইটের ক্ষেত্রে অন্য কোন রং ব্যবহার করা যায় কিনা, সেই বিষয়েও চিন্তা ভাবনা করার কথা বলেছেন তিনি।
নয়ন ঘোষ