শাল, সেগুন আর মহুয়ার জঙ্গলের মাঝে অবস্থান দেবশালা গ্রামের (Bangla News)। এই গ্রামের বক্সি পরিবার একসময় জমিদার ছিল। তাদের পরিবারের পুজো আজ এক বিস্ময়ের কারণ। এখানে বিগত আড়াইশো বছর ধরে দেবী দুর্গা শুধু মুখমন্ডলের পুজো নিয়ে আসছেন। বক্সি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবারের ষষ্ঠ পুরুষ নেহাল চাঁদ বক্সী এই মস্তক পুজোর প্রচলন করেন। দেবীর মস্তক পুজো চলে আসছে আনুমানিক ২৫০ বছর ধরে। তাদের মূল পুজোটি আরও পুরনো।
advertisement
পরিবারের সদস্যরা বলেন, দেবীর স্বপ্নাদেশে এমন মস্তক পুজোর প্রচলন করেছিলেন নেহাল চাঁদ বক্সি। তিনি ছিলেন পরিবারের ষষ্ঠ পুরুষ। একবছর এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছিল খরা। পুজো কিভাবে করবেন, তার কোনো কূলকিনারা খুঁজে পাচ্ছিলেন না জমিদার নেহাল চাঁদ বক্সি। তখন দেবী স্বপ্নাদেশ দেন, খরা হলেও, তিনি তার পুজো নিতে চান। অর্থ সামর্থ্য না থাকলে যেন দেবীর পুজো শুধুমাত্র মস্তক পুজো করা হয়। তখন থেকেই এই নিয়ম চলে আসছে।
মতান্তরে অনেকেই আবার বলেন, এক বছর মূর্তিতে আগুন লেগে যায়। সে সময় প্রতিমাটি পুড়ে যায়। শুধুমাত্র অক্ষুন অবস্থায় ছিল দেবীর মুখমন্ডল। তখন দেবীর স্বপ্নাদেশে, ওই মস্তকের পুজো করা হয়। সেসময় থেকেই দেবশালা গ্রামের বক্সী পরিবারে দেবীর মস্তকের পুজো হয়ে আসছে।
দেবীর মূর্তি কলাপেটকো, মানপাতা এবং পুজোর সামগ্রী দিয়ে রাখা হয়। সাজানো হয় সোনার দুল, মুকুট, মালা দিয়ে। বক্সি পরিবারের দুর্গাপুজোয় চতুর্থীতে চাল কুমড়ো বলি প্রথা চালু রয়েছে। পঞ্চমীতে হয় সন্ধারতি। ষষ্ঠীর দিন হয় বোধন এবং বেলবরণ। এই পরিবারের দুর্গাপুজোয় আগে পশুবলি প্রথা চালু ছিল। তবে ২০১৮ সাল থেকে প্রশাসনের নির্দেশে এখানে পশুবলি প্রথা নিষিদ্ধ। আগে এখানে নবমী এবং দশমীতে পশ বলি হত। তবে এখন হয় চালকুমড়ো বলি। বক্সী পরিবারের সকল সদস্যরা পুজোর কটা দিন মেতে ওঠেন আনন্দে।
যদিও চলতি বছরে বক্সি পরিবারের দুর্গাপুজো এবার ধুমধামের সঙ্গে হবে না বলেই খবর। কারণ পরিবারের সদস্য তথা তৃণমূল নেতা চঞ্চল বক্সি মাস দুয়েক আগেই গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। তাই এবছর পুজো স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বক্সী পরিবার, খবর এমনটাই।
Nayan Ghosh