বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদের আট রানির ছিলেন কিন্ত একমাত্র পুত্র সন্তান ছিলেন প্রতাপ। ১৮১৬ সালে পিতার বর্তমানেই বর্ধমানে রাজ সিংহাসনে বসেন রাজা প্রতাপ চাঁদ। ১৮২০ নাগাদ হঠাৎ একদিন তার পিতা রাজা তেজচাঁদের কাছে খবর আসে প্রতাপ চাঁদের মৃত্যু হয়েছে এবং তার দাহ করা হয়েছে,কিন্তু কোন দেহ দেখান হয়নি তেজচাঁদকে।
advertisement
এই খবর তিনি পেয়েছিলেন দেওয়ানবাবু পরান চাঁদ কাপুরের কাছে। পরান চাঁদ কাপুর একদিকে তার শ্যালক ও অন্য দিকে শ্বশুর। প্রতাপের মৃত্যুর পর ফের সিংহাসনে বসেন রাজা তেজচাঁদ। এরপর প্রায় ১২ বছর অর্থাৎ ১৮৩২ সাল পর্যন্ত রাজা তেজচাঁদ রাজত্ব করেন কিন্তু তেজচাঁদের অবর্তমানেকে সিংহাসনে বসবে এটাই ছিল চিন্তার বিষয়। দেওয়ান তার পুত্র মহাতাব চাঁদকে দত্তক নিতে বলেন রাজাকে। দত্তক নেওয়ার কিছুদিন পরে রাজ বংশের উত্তরাধিকার হয়ে সিংহাসনে বসেন মহাতাব চাঁদ।হঠাৎ ১৮৩৪ সালে গোলাপবাগ এলাকায় এক সাধু এসে দাবি করেন তিনিই প্রতাপ চাঁদ,সন্ন্যাস গ্রহণ করায় কিছুদিন নিখোঁজ ছিলেন।
খবর পেয়ে দেওয়ান পরান চাঁদ কাপুর ওই সন্ন্যাসীকে ধরে আনতে নির্দেশ দিলে সেখান থেকে সে পালিয়ে বর্তমান বাজেপ্রতাপপুর এলাকায় একটি শিব মন্দিরে আস্তানা নেই। খবর পেয়ে সেখান থেকে তাকে হটিয়ে দিতে একজন দেওয়ান এবং দুজন লেঠেলকে নির্দেশ দেন পরান চাঁদ কাপুর। সেই দেওয়ান যেখানে থাকা শুরু করেন সেই জায়গায় নাম পরবর্তীতে হয় হটুদেওয়ান, যে লেঠেলরা এসে ছিল তাদের নাম বিজয় আর রাম, এই লেঠেলরা যেখানে আস্তানা করেন তাদের নাম অনুসারে পরবর্তীতে সেই জায়গায় নাম বিজয় রাম।
পরবর্তীকালে সেই সন্ন্যাসী চলে যান কালনায়। আগাগোড়া ধোঁয়াশায় ভরা মামলা ঘটনা। ঘটনা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। বিখ্যাত ‘ভাওয়াল সন্ন্যাসী মামলা’র মতোই আরেকটি বহু আলোচিত মামলা এই ‘জাল প্রতাপ মামলা’। পরে আদালতে সন্ন্যাসী রাজা ছিলেন এই তথ্য দিতে ব্যর্থ হলে কেস হেরে যান।এবং যেহেতু তিনি নকল প্রতাপ বলে প্রমাণিত হন তাই তিনি যেখানে আস্তানা নেন সেই জায়গায় নামকরন হয় বাজেপ্রতাপপুর।
সেই নকল প্রতাপের আস্তানা থেকেই জন্ম নেয় ‘বাজেপ্রতাপপুর’ নামটি যা আজও বর্ধমানের রাজ আমলের বিতর্কিত এক অধ্যায়কে বহন করে চলেছে। রাজার রাজত্ব আর নেই কিন্তু আজও রাজকর্মচারী এবং এক ‘নকল প্রতাপের’ কাহিনিকের সাক্ষী এই এলাকা।