ফলে গ্রামের পর গ্রামের মানুষ এই চক্রের কবলে পড়ছেন। ক্যানিং ১ ব্লকে এই কিডনি পাচারচক্র সব থেকে সক্রিয় হাটপুকুরিয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। এছাড়াও খাস কুমড়োখালি, দাঁড়িয়া-সহ নানা গ্রামের মানুষও এই চক্রের কবলে পড়ে নিজেদের কিডনি বিক্রি করছেন। মূলত তাঁদেরকে মোটা টাকার লোভ দেখানো হচ্ছে, আর এতেই রাজি হয়ে যাচ্ছেন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো।
advertisement
সূত্রের খবর, এক একটা কিডনির জন্য ৭ থেকে ৯ লক্ষ টাকা দেওয়ার লোভ দেখানো হচ্ছে গ্রামের সাধাসিধে মানুষদের। কেউ রাজি হলেই তাঁকে অগ্রিম ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এরপর চলছে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা। দালালরাই কিডনি দাতা খুঁজে বের করেন। তাঁদেরকে টাকার লোভ দেখানো থেকে শুরু করে তাঁদের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করার কাজও তারাই করে। এরপর কিডনি গ্রহীতার সঙ্গে যোগাযোগ করেন দালালরা। রক্তের গ্রুপ মিলে গেলে বিডিও অফিসে শুনানির জন্য আবেদন করা হয়।
উভয়পক্ষকে সেখানে ডাকা হয় প্রশাসনের তরফে। তবে, সেখানে দালালের শেখানো বুলিই আওড়ান কিডনি দাতারা। স্ব-ইচ্ছায়, বিনামূল্যেই তাঁরা কিডনি দান করছেন বলে বয়ান দেন ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের সামনে। গ্রহীতা বিপদের সময় দাতাকে সাহায্য করেছেন, নিজের খুবই কাছের মানুষ বা নিকট আত্মীয় বলেও পরিচয় দেন তাঁরা। বাধ্য হয়েই পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দিয়ে একপ্রকার কিডনি প্রতিস্থাপনের নির্দেশ নামায় স্বাক্ষর করেন ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ব্লক প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “বুঝতে পারছি যে মোটা টাকার বিনিময়ে কিডনি বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দু’পক্ষের কেউই সেটা আমাদের সামনে স্বীকার করছেন না। তাই বাধ্য হয়েই পুলিশকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিচ্ছি। কিন্তু সেখানেও পুলিশ কিছুই করতে পারছে না। মানুষ নিজে থেকে সচেতন না হলে এই কিডনি পাচার বন্ধ করা যাবে না।”
আরও পড়ুন: চাকরি হারাতেই হাউ হাউ কান্না, কী হবে ভবিষ্যৎ? স্বেচ্ছামৃত্যু চাইছেন চাকরিহারা শিক্ষিকারা
যদিও বিডিও ক্যানিং ১ নরোত্তম বিশ্বাস বলেন, “আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে কেউই অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে নিশ্চয় ক্ষতিয়ে দেখা হবে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই কিডনি প্রতিস্থাপন হয়ে যাওয়ার পর কিডনি দাতাকে বকেয়া টাকা দেওয়া হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ক্যানিংয়ের হাটপুকুরিয়ার বাসিন্দা মোজাম মোল্লা বলেন, “উত্তর প্রদেশের এক ব্যবসায়ীকে কিডনি দিয়েছিলাম। দালাল ৮ লক্ষ টাকা দেবে বলেছিল। কিন্তু অগ্রিম ৩ লক্ষ টাকা ও অপারেশানের দিন ২ লক্ষ টাকা দেয়। বাকি টাকা আজও দেয়নি। নানা জায়গায় জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। আমার মতো অনেকের সাথেই এই ঘটনা ঘটেছে। টাকা না পেলেও কেন দালালদের ক্ষপ্পরে পড়ছেন সধারণ মানুষ!
স্থানীয় বাসিন্দা রেজিনা বিবি বলেন, “ গ্রামের মানুষ আমরা। সামান্য উপার্জন। একটা কিডনির বিনিময়ে লক্ষ লক্ষ টাকার লোভ অনেকেই সামলাতে পারিনি। একটা কিডনি দিয়ে দিলেও সেরকম কোন সমস্যা হয় না বলে শুনেছি। তাই ঐ টাকা দিয়ে দোকান বা ব্যবসা করা যাবে ভেবেই অনেকে রাজি হচ্ছে। সব দালালরা তো আর খারাপ না যে টাকা দেবে না।”
সূত্রের খবর, এক একটা কিডনি আসলে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়। মাঝে অনেকগুলো হাত হয়ে এই টাকার লেনদেন হয়। ক্যানিং পশ্চিমের বিধায়ক পরেশ রাম দাস বলেন, “ এই খবর শুনে চমকে উঠছি। এভাবে চলতে থাকলে এই এলাকার মানুষ নিজেদের সাধারণ কর্মক্ষমতা হারাবে। এলাকায় গিয়ে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করবো। পাশাপাশি দলীয় নেতৃত্বকেও বলব এ বিষয়ে এলাকায় সজাগ দৃষ্টি রাখতে।
সুমন সাহা