তমলুকের শক্তি পীঠের প্রাচীন নাম বিভাস। দেবী এখানে বর্গভীমা বা ভীমারূপা নামে অধিষ্ঠিত। ভৈরব সর্বানন্দ মতান্তরে কপালি। মহামায়া সতীর দেহাংশের মধ্যে বাম গুল্ফ বা বাম পায়ের গোড়ালি পড়েছিল এখানে। ১৪৬৬ খ্রিস্টাব্দ মুকুন্দরামের চন্ডীমঙ্গল কাব্যে গোকুলে গোমতী নামা তাম্রলিপ্তে বর্গভীমা এবং মার্কণ্ডেও পুরাণে আছে দেবী বর্গভীমার উল্লেখ। তমলুকে অতীতে কোন শক্তি পুজো হত না। শুধুমাত্র দেবীর বর্গভীমার পুজো হত।
advertisement
আরও পড়ুন: Kali Puja 2025: অন্ধকার ঘরে কাঁটার আসনে পুজো, দুবরাজপুরের শতাব্দী প্রাচীন শ্মশানকালী আজও জাগ্রত!
কিন্তু একসময় তমলুকে দুর্গা, জগদ্ধাত্রী পাশাপাশি কালীপুজোর প্রচলন শুরুর সময় সমস্যা দেখা দিলে তৎকালীন প্রবীণেরা নিদান দেন পুজো শুরু করার আগে দেবী বর্গভীমা মাকে পুজো দিয়ে অনুমতি নিতে হবে। এই থেকেই এই অনুমতি নেওয়ার নিয়ম চলে আসছে।
আরও পড়ুন: Kali Puja 2025: হাতে মাত্র কয়েক দিন! দীপান্বিতা কালীপুজোয় কী ভোগ নিবেদন করা হবে মা তারাকে!
এ বিষয়ে মন্দিরের পুরোহিত পুষ্পেন্দু চক্রবর্তী জানান, ” কালীপুজোর দিন তমলুক পরগনার সমস্ত বাড়ির পুজো এবং ক্লাবের পুজো শুরু হওয়ার আগে। মাকে লাল বস্ত্র লাল ফুল, মিষ্টান্ন ও ফল দিয়ে পুজো দিতে হয়। বছরের পর বছর এটাই চলে আসছে।”
তমলুক শহরে যত কালীপুজো হয় প্রত্যেক ক্লাব বা প্রতিষ্ঠান সুসজ্জিত শোভাযাত্রার মাধ্যমে দেবী বর্গভীমা মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে তাদের কালীপুজো শুরু করে। ওইদিন বিকেলের পর থেকেই সুসজ্জিত শোভাযাত্রা সহকারে দলে দলে দেবী বর্গভীমা মাকে পুজো দিতে আসেন বিভিন্ন ক্লাব বা প্রতিষ্ঠানের ওদের পাশাপাশি পারিবারিক পুজোর ব্যক্তিরা।
সতীর একান্ন পীঠের এক পীঠ তমলুকের দেবী বর্গভীমা, বর্তমানেও নিষ্ঠার সঙ্গে পুজিত হয় মা, শক্তি পুজো শুরুর আগে রয়েছে অনুমতি নেওয়ার প্রথা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সদর ঐতিহাসিক তাম্রলিপ্ত বা তমলুকের আজও মধ্যমণি মা বর্গভীমা।
কয়েক হাজার বছর ধরে শক্তি স্বরূপিণী আদ্যাশক্তি মহামায়া রূপে দেবী বর্গভীমার আরাধনা চলে আসছে। ওড়িশি স্থাপত্যের আদলে এই দেউলের উচ্চতা প্রায় ৬০ ফুট। মন্দিরের দেওয়ালে টেরাকোটার অজস্র কাজ। তার মধ্যেই মন্দিরের গর্ভগৃহে কালে পাথরে তৈরি মায়ের মূর্তি বিরাজ করছে দেবী উগ্রতারা রূপে। দীপান্বিতা অমাবস্যায় রাজরাজেশ্বরী রূপে পূজিতা হন দেবী বর্গভীমা।