দক্ষিণবঙ্গ: দু হাজার বছরের প্রাচীন কালীমূর্তি। অথচ তার গায়ে খোদাই মানব দেহের সব শিরা উপশিরা, অস্থি। তখন কতটা উন্নত ছিল বিজ্ঞান! তা ভেবে অবাক বর্তমানের শল্যচিকিৎসকেরা। এ রাজ্যের কোথায় রয়েছে এমন পাথরের কালীমূর্তি?
দক্ষিণবঙ্গের প্রাচীন কালীমন্দির গুলির মধ্যে অন্যতম বর্ধমানের কাঞ্চননগরের কঙ্কালেশ্বরী কালীমন্দির। নিষ্ঠার সঙ্গে সারা বছর নিত্যপুজো হয় এখানে। বিশেষ পুজো হয় দীপান্বিতা কালীপুজোয়। এখানে মায়ের মানব কঙ্কালের আকার। নাম তাই কঙ্কালেশ্বরী।
advertisement
বাংলার ১৩২৩ সালে দামোদর নদীর তীরে পাওয়া যায় কঙ্কালেশ্বরী কালীর মূর্তি। কমলানন্দ পরিব্রাজক নামে এক সাধক স্বপ্নাদেশ পান। তিনিই দেবীমূর্তি সংগ্রহ করে কাঞ্চননগরের মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন।
আমরা সাধারণত চার হাতের কালী প্রতিমা দেখি। দেবী এখানে অষ্টভূজা। শায়িত শিবের নাভি থেকে উৎপত্তি হয়েছে পদ্মের। সেই পদ্মের ওপর দেবী বিরাজমান। চামুণ্ডা মতে পুজো হয় এখানে। মা কঙ্কালেশ্বরীর মূর্তি সাত ফুট লম্বা ও তিন ফুট চওড়া। মা অষ্টভুজা, চামুণ্ডা। মানব কঙ্কালের যতগুলি হাড় থাকে সব খোদাই করা রয়েছে পাথরের এই মূর্তিতে। তাই মায়ের নাম কঙ্কালেশ্বরী। ইতিহাসবিদরা বলছেন, মানব দেহের সমস্ত শিরা-উপশিরাও প্রকাশিত মাতৃমূর্তিতে। তখনকার দিনে বিজ্ঞান কত উন্নত ছিল তা এই মূর্তি দেখলে অবাক হতে হয়।
পুরাতত্ত্ববিদদের মতে, এই মূর্তি বৌদ্ধ বা পাল যুগের। দু হাজার বছরেরও বেশি প্রাচীন। মানব দেহের প্রতিটি শিরা উপশিরা খোদাই করা রয়েছে দেবীমূর্তিতে।
কয়েক দশক আগেও এই মন্দির চত্বর ঘন ঝোপ জঙ্গলে পরিণত ছিল। এখন এই চত্বর সংস্কার করা হয়েছে। চারদিক ঝকঝকে। রয়েছে সাজানো জলাশয়। পাশেই রয়েছে ভক্তদের বিশ্রাম বা বসার জন্য সুন্দর করে সাজানো জায়গা। প্রতিদিন দশ টাকার কুপনে মায়ের অন্নভোগ গ্রহণ করা যায়। সেই ভোগ খাওয়ার জন্য রয়েছে বিশাল পরিকাঠামো। রাতে খাওয়ারও ব্যবস্হা রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। দীপান্বিতা কালীপুজোয় অগণিত পুরুষ মহিলা ভিড় করেন। সারারাত হাজার হাজার মানুষ ভোগ গ্রহণ করেন।