অমর ২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস চারিদিকে পালিত হল যথাযোগ্য মর্যাদায়। মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন জায়গাতেও পালিত হয়েছে এই দিনটি।
ভাষা আন্দোলনে শহিদ আবুল বরকতের জন্মভিটে মুর্শিদাবাদ জেলার সালার থানার বাবলা গ্রামে। এদিন তাঁর শহিদ বেদীতে মাল্যদান ও পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্টানের সূচনা হয়। ১৯৫২ সালে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার লক্ষ্যে যারা শহিদ হয়েছিলেন তাঁদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও স্মৃতি চারণ করা হয় এইদিন। পাশাপাশি কান্দি রাজ কলেজে অনুষ্ঠান হল আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের।
advertisement
আরও পড়ুন: ভীম পুজো করে সমুদ্রে ভেসেছিল চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙা
ভাষা আন্দোলনের জন্য শহিদ বেদীতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করা হয় এই দিনটিতে। কান্দি রাজ কলেজের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অপূর্ব সরকার, কান্দির পুরপ্রধান জয়দেব ঘটক ও কান্দি রাজ কলেজের অধ্যক্ষ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
উর্দুর বদলে সংখ্যাগরিষ্ঠের মাতৃভাষা বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার দাবিতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়। আন্দোলন দমনের জন্য খানসেনা ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে। ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে চলে। পুলিশ গুলি চালায়। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ আবুল বরকত লুটিয়ে পড়েন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে ওইদিন রাত ৮ টায় বরকতের মৃত্যু হয়েছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি রাতেই ঢাকার আজিমপুর গোরস্থানে পুলিশ বরকতের দেহ সমাধিস্থ করে। সেখানেই একুশের আরও চার শহিদ আব্দুস সালাম, রফিকুদ্দিন আহমেদ, শফিউর রহমান ও আব্দুল জাব্বার শায়িত আছেন।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন
https://whatsapp.com/channel/0029VaA776LIN9is56YiLj3F
পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিলের উপর ট্রাক চালিয়ে আরও তিনজনকে পিষে মেরে ফেলা হয়। ওই ভাষা শহিদদের স্মরণে রেখে ২০০০ সালে ২১ ফেব্রুায়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। ‘১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি যে সব ভাষা সৈনিক শহিদ হন’ নিবন্ধ থেকে জানা যায়, মোট ৮ জন ভাষা শহিদের মধ্যে দুই বাঙালির জন্মভূমি হুগলি ও মুর্শিদাবাদ। হুগলিতে জন্ম ভাষা শহিদ শফিউর রহমানের আর মুর্শিদাবাদের সালার থানার বাবলা গ্রামে জন্ম আবুল বরকতের। ১৯২৭ সালের ১৩ জুন বাবলা গ্রামে জন্ম বরকতের। তাঁর ডাকনাম আবাই। ১৯৪৫ সালে সালারের তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে তিনি ভর্তি হন বহরমপুরে কৃষ্ণনাথ কলেজে। সেখান থেকে আইএ পাশ করে ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে অধুনা বাংলাদেশ গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে চতুর্থ স্থান অধিকার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সাম্মানিক সহ বিএ পাশ করেন। তারপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ ক্লাসে ভর্তি হন। পড়া শেষ করার আগেই ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আজও প্রত্যেক ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাবলা গ্রামের পৈত্রিক জন্ম ভিটেতে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করা হয়।
কৌশিক অধিকারী