উত্তর ২৪ পরগনার তিলজলার বাসিন্দা মহম্মদ শাহেনশার জীবনের গল্প যেন সিনেমার চিত্রনাট্য। অন্ধকার থেকে আলোয় ফেরার সেই যাত্রার গল্পই এখন নেশাগ্রস্থদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। মাত্র আট বছর বয়সে বন্ধুবান্ধবের হাত ধরে নেশার জগতে প্রবেশ করেন শাহেনশা। হেরোইন থেকে শুরু করে ইনজেকশন, এন১০ সহ কোন নেশা তার অচেনা ছিল না। সেই সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজকর্মে।
advertisement
দিনের পর দিন একই সিরিঞ্জে ইনজেকশন নেওয়া, রাস্তায় দিন কাটানো, নেশার টাকা জোগাড় করতে ছোটোখাটো অপরাধ – সবটাই ছিল তাঁর জীবনের অঙ্গ। একাধিকবার জেলেও যেতে হয় তাঁকে। এই ধরনের নেশায় আসক্তির মধ্যে অপরাধমূলক কাজকর্ম করতেও যেন আনন্দ লাগত, অকপট স্বীকারোক্তি নেশার জগত ছেড়ে আসা এই শাহেনশার। দীর্ঘ প্রায় ১৬-১৭ বছর ধরে চলে আসা এই নিকৃষ্ট জীবনের কারণে সমাজ ও পরিবার যখন তাঁকে ছেড়ে দিয়েছিল, তখন হৃদয়পুরের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে আশ্রয় মেলে তাঁর।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
জামাকাপড়হীন, একেবারে শারীরিকভাবে ভেঙে পড়া অবস্থায় তাঁকে হোমে আনা হয়। চিকিৎসা, যত্ন এবং মানসিক সুস্থতার প্রশিক্ষণে ধীরে ধীরে বদলাতে থাকে শাহেনশার জীবন। নেশার প্রভাব ছাড়তে খিঁচুনি, উত্তেজনা, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া- সব পেরিয়ে তিনি এখন এক দায়িত্ববান মানুষ। বর্তমানে হোমের একজন নির্ভরযোগ্য সদস্য এই মহম্মদ শাহেনশা। তার এই জীবন বদলের গল্প আজ অনেক নেশাগ্রস্থ মানুষকেই ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে।
এসবের কারণে জেলা পুলিশের তরফে বারাসাত রবীন্দ্রভবনে বিশেষ এই দিনে তাঁকে দেওয়া হল সম্মান। তাঁর জীবনের এই আমূল পরিবর্তনকে সমাজের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরতে চায় প্রশাসন। পুলিশ কর্মকর্তারাও মনে করেন, শাহেনশার গল্প ভবিষ্যতের বহু যুবককে মাদক ছেড়ে সুস্থ জীবনের পথে ফিরতে অনুপ্রেরণা জোগাবে। বারাসাত জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ যেন সচেতনতা গড়ার পথে হয়ে রইল এক বড় পদক্ষেপ।
Rudra Narayan Roy