গ্রামবাংলার মাটির গন্ধ মাখা লোকশিল্প কালিকাপাতারি আজ ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াইয়ে যাঁরা আজও মঞ্চে উঠে গান-অভিনয়ে প্রাণ ঢালেন, তাঁদের জীবনের গল্প খুব কমই শোনা যায়। তেমনই এক সংগ্রামী শিল্পীর নাম কৃষ্ণা রাইল।
advertisement
অভাবের পরিবারে জন্ম কৃষ্ণার। ছোটবেলা থেকেই সংসারের টানাটানি, নুন-ভাতের জন্য লড়াই ছিল নিত্যসঙ্গী। কিন্তু দারিদ্র্য তাঁর স্বপ্ন কেড়ে নিতে পারেনি। শৈশবকাল থেকেই তিনি যুক্ত কালিকাপাতারি দলের সঙ্গে। মায়ের হাত ধরে প্রথম মঞ্চে ওঠা, ঢাকের তালে তালে দেবীর বন্দনা-এই ভাবেই বড় হয়ে ওঠা কৃষ্ণার। পড়াশোনার পাশাপাশি লোকশিল্পই হয়ে ওঠে তাঁর জীবনের একমাত্র অবলম্বন। কখনও মঞ্চ আলোয় ঝলমল, আবার কখনও অনাহার-এই দু’য়ের মাঝেই কাটছে তাঁর জীবন। সময় বদলেছে, কিন্তু শিল্পীর ভাগ্য বদলায়নি।
বর্তমানে কৃষ্ণা ও তাঁর স্বামী দু’জনেই কালিকাপাতারি দলে অভিনয় করেন। গ্রামে গঞ্জে যেখানে ডাক আসে, সেখানেই ছুটে যান। কখনও দূরদূরান্তে হেঁটে, কখনও গাড়িতে চেপে পৌঁছতে হয় অনুষ্ঠান স্থলে। সারারাত অভিনয়ের পর ভোরের আলো ফোটার আগেই ফের বাড়ি ফেরা। তবুও হাতে আসে সামান্য কিছু পারিশ্রমিক। সেই টাকাতেই কোনও মতে চলে সংসার। নিয়মিত কাজের নিশ্চয়তা নেই, নেই কোনও সরকারি সহায়তার ভরসা। তবুও লোকসংস্কৃতির প্রতি অগাধ ভালবাসাই তাদের বারবার মঞ্চে ফিরিয়ে আনে। কৃষ্ণা বলেন, ‘শিল্পটাই আমাদের জীবন। না করলে বাঁচব কী করে।’
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
কৃষ্ণার স্বামী বলেন, ‘এই কাজটা আমরা ভালবেসে করি। কিন্তু ভালবাসা দিয়ে তো সংসার চলে না। কোনও দিন কাজ থাকে, কোনও দিন থাকে না। তবুও কালিকাপাতারি ছেড়ে অন্য কিছু করতে মন মানে না। এই শিল্পটাই আমাদের পরিচয়, আমাদের বাঁচার অবলম্বন।’
অভাব, অনিশ্চয়তা আর সামাজিক অবহেলার মাঝেও কালিকাপাতারি শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষ্ণা রায়। তার মতো অসংখ্য লোকশিল্পীর ঘাম, কষ্ট আর আত্মত্যাগের উপর দাঁড়িয়ে আজও টিকে আছে বাংলার লোকসংস্কৃতি। প্রশ্ন থেকে যায়, এই শিল্প আর শিল্পীদের রক্ষায় কি সমাজ ও প্রশাসনের দায়িত্ব নয়?





