গ্রামের মহিলারা দলবেঁধে এসে ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করে নিয়ে যায় বিভিন্ন স্বাদের পিঠে তৈরি করবার জন্য। রুকেশপুর গ্রামের বাসিন্দা আঙুর সাঁতরার বাড়িতে প্রায় ৬০-৬৫ বছর আগে থেকেই ঢেঁকির প্রচলন রয়েছে। মকর সংক্রান্তি এলেই শুরু হয়ে যায় ঢেঁকিতে চাল গুঁড়ো করা। একটা সময় ছিল যখন গ্রামের মহিলারা রাত জেগে চাল গুঁড়ো করতেন, কিন্তু সে সব দিন এখন বদলে গিয়েছে। সেই জায়গায় দখল করেছে আধুনিক যন্ত্র। যেখানে সহজেই চাল গুঁড়ি করা যায় আবার অনেকেই বাজার থেকে চাল গুঁড়ি কিনে পিঠে তৈরির করে। আর ঢেঁকিতে চালগুঁড়ি করতে অনেক পরিশ্রম ও লোকের প্রয়োজন হয়। দু’কেজি চাল গুঁড়ো করতে সময় লাগে প্রায় তিন ঘন্টা।
advertisement
আরও পড়ুন: কালনায় জাল নথি নিয়ে পাসপোর্ট করাতে গিয়ে গ্রেফতার বাংলাদেশি যুবক-সহ ২
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
কীভাবে পাতা হয় ঢেঁকি? সংক্রান্তির দিন ১০ আগে থেকেই ঢেঁকি পাতার কাজ শুরু হয়, প্রথমে ঢেঁকিকে পরিষ্কার করে নেওয়া হয়। তারপর ছোট ছোট ‘পুয়া’ অর্থাৎ কাঠ কেটে ঢেঁকির নিচে পুঁতে দেওয়া হয়। এরপর ঢেঁকির সামনের অংশে যেখানে চাল দেওয়া হয় সেখানে বসানো থাকে একটি লোহার গোলাকৃতি ‘গড়’। তার নিচে বসানো থাকে একটি পাথর। গড়ের চারপাশ মাটি দিয়ে ভরা হয়। ঢেঁকির মুখের অংশ গড়ে গিয়ে পড়ে এবং সহজেই চাল গুঁড়ো হয়ে যায়। ঢেঁকি যত বেশি ওজন হবে তত তাড়াতাড়ি গুঁড়ো হবে চাল। প্রথমে চাল ভিজিয়ে নেওয়া হয়। কিছুটা নরম হয়ে যাওয়ার পর তারপর গড়ে দেওয়া হয়। ঢেঁকির অপরপ্রান্তে পা দিয়ে চাপ দিলেই সামনের অংশ গড়ে গিয়ে পড়ে। তখনই চাল গুঁড়ি হয়। এরপর সেখান থেকে চাল তুলে চালুনিতে চেলে নিলেই তৈরি হয়ে যায় চাল গুঁড়ি। আর সেই চালের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি হয় সরা পিঠে, পুলি পিঠে, ভাজা পিঠের মত বিভিন্ন স্বাদের পিঠে। মেশিনে ভাঙ্গা চালের থেকে ঢেঁকির চালের গুঁড়ি দিয়ে যে পিঠে তৈরি করা হয় তার স্বাদও আলাদা হয়।
আরও পড়ুন: আন্তর্জাতিক যোগাসন প্রতিযোগিতায় দশ দেশকে পেছনে ফেলে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছে চন্দননগরের মেয়ে
আঙুর সাঁতরা বলেন, “সারা বছর ঢেঁকি তোলা থাকে আর পৌষ সংক্রান্তি এলেই পাতা হয়। অনেক পুরনো এই ঢেঁকি। শ্বাশুড়ির কাছে শুনেছি প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ বছর আগের ঢেঁকি। পৌষ সংক্রান্তি এলেই আমাদের বাড়িতে গ্রামের অনেক মহিলা ঢেঁকিতে চাল ভাঙতে আসেন। সবাই একসঙ্গে বসে চাল ভাঙা হয়। হাসি আর গল্প করতে করতেই চলে চাল ভাঙা। আর ঢেঁকিতে চাল ভাঙা পিঠের স্বাদই আলাদা, এখন অনেক মেশিন বেরিয়েছে কিন্তু ঢেঁকি চালের স্বাদের তুলনা হয় না। সরা পিঠে বা পুলি পিঠে করতে গেলে মেশিনের চালে খুব একটা ভাল হয় না যেটা ঢেঁকির চালে হয়।”
Rahi Haldar





