খড়গ্রাম ব্লকে অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে প্রাচীন অনেক কুটির শিল্প ছিল এই এলাকায়। যার মধ্যে সবথেকে নামডাক ছিল কামার শিল্পের। এক সময় রাজ্য জুড়ে প্রসিদ্ধ ছিল নগরের জাঁতি, বটি, কাটারির মতো যন্ত্রপাতি। ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প আজও টিকে রয়েছে।
advertisement
কামাররা পেশাগতভাবে গৃহস্থালির কাজে ব্যবহার্য লৌহজাত সামগ্রী তৈরি করে। কামারের কর্মস্থলকে বলে কামারশালা। কামারশালায় হাপর দিয়ে কয়লার আগুনকে জ্বালিয়ে রাখা হয়। এই আগুনে লোহা গরম করে তাকে পিটিয়ে বিভিন্ন আকারের জিনিস তৈরি করা হয়। গ্রামের বাজারে অথবা নির্দিষ্ট পাড়ায় কামারপাড়া আছে অনেক জায়গায়।
লোহার কারিগরদের লোহা দিয়ে নানা দ্রব্যসামগ্রী বানানো, লোহা পেটানোর কর্কশ শব্দ, পোড়া গন্ধ, পোড়া লোহা থেকে বিচ্ছুরিত আগুনের স্ফুলিঙ্গই কামারপাড়ার সাধারণ দৃশ্য। কামাররা এখন শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজ, সেচকাজ ও গৃহায়ণের সঙ্গে কামারদের অস্তিত্ব সরাসরি সম্পৃক্ত।
আগেকার দিনে বেশির ভাগ ঘরবাড়ি ও কৃষি যন্ত্রপাতি কামারদের দ্বারা তৈরি হত। বর্তমানে তাদের প্রস্তুতকৃত সামগ্রীর মধ্যে দা, কোদাল, কুড়াল, শাবল, বঁটি, পেরেক, ছুরি, চিমটি, হাতা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কৃষিকাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে লাঙলের ফলা, কাস্তে, নিড়ানি, বেদে কাটি, খুন্তি ইত্যাদি। কামাররা কাঠমিস্ত্রিদের ব্যবহার্য যেসব যন্ত্রপাতি তৈরি করে সেগুলো হচ্ছে করাত, বাইস, বাটালি, রান্দা, হাতুড়ি ইত্যাদি।
তবে বর্তমানে এই সমস্ত জিনিস তৈরি করে বিভিন্ন মেলাতে বিক্রি করে থাকেন এই ছোট ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। প্রায় দশটি পরিবার আজও বাঁচিয়ে রেখেছেন এই শিল্পকে। গ্রাম বাংলার এই কুটির শিল্প টিকিয়ে রেখেছেন বর্তমানে নগরের এই যুবকরা। মাসে গড়ে দশ হাজার টাকা রোজগার হয়, যা দিয়েই চলে সংসার।
কৌশিক অধিকারী