আরও পড়ুনঃ বাড়ছে অস্বস্তিকর গরম, আর কতদিন? জরুরি আপডেট দিল হাওয়া অফিস
ঠিক কী হয়েছিল পিয়ালীর সঙ্গে?
১৭ই মে ভোর বেলায় মাকালু শৃঙ্গ জয় করে বেস ক্যাম্পে ফিরছিলেন পিয়ালী ও তাঁর দুই শেরপা। পথে ফেরবার সময় পিয়ালীরা দেখতে পান এক বিদেশী পর্বতারোহী গ্লেসিয়ারের মধ্যে পড়ে গিয়ে ঝুলছেন। তাঁর সঙ্গে আর কেউ নেই। তড়িঘড়ি ওই ব্যক্তির উদ্ধারকাজে লেগে পড়েন পিয়ালীরা। সকাল আটটার মধ্যে পিক সামিট করা হয়ে গেলেও ওই ব্যক্তিকে উদ্ধার করার জন্য পিয়ালী ও তাঁর শেরপাদের ৫ ঘন্টা সময় লাগে। যার ফলে তাঁদের কাছে থাকা পর্যাপ্ত অক্সিজেন একেবারে ফুরিয়ে আসে। উদ্ধার কাজ করতে গিয়ে চশমা খুলে থাকার দরুন পিয়ালীর “স্নো ব্লাইন্ডনেস” এর স্বীকার হয়ে যান। এমন সময় পিয়ালীর শেরপাদের সঙ্গে উদ্ধার করা ব্যক্তিকে পিয়ালী পাঠিয়ে দিলেও নিজে আর যেতে পারেন না। তারপরেই আসে তুষার ঝড়। ৪৮ ঘন্টা বরফের মধ্যে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন যাতে উদ্ধারকারী দল তাঁকে এসে উদ্ধার করতে পারে।
advertisement
পিয়ালী বসাক জানিয়েছেন, এক জায়গায় ব্যালেন্স করে কম করে ৪৮ ঘন্টা তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন একইভাবে। ‘স্নো ব্লাইনডনেস’ বা বরফের কারণে তিনি কিছুই দেখতে পাচ্ছিলেন না। আর একটু বেগতিক হলে তিনি নিজেও পড়ে যাবেন বরফের খাদে। তাই না কোনও খাবার না কোনও জল এমনকী অক্সিজেন সিলিন্ডারে ছিল না কোনও অক্সিজেন। সব কিছু ছেড়ে দাড়িয়ে থেকে ছিলেন উদ্ধারকারীদের আশায়।
পিয়ালী বলেন, ‘তাঁর শেরপারা আশায় ছেড়ে দিয়েছিল পিয়ালীকে জীবিত অবস্থায় দেখবে। কারণ একটা গোটা দিন ধরে তুষার ঝড় চলে গেছে। বরফের মধ্যে নিজের সমস্তটুকু দিয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পিয়ালী। যখন শেরপারা তাঁর কাছে এসে পৌঁছায় তারা নিজেরাও অবাক যায় কী ভাবে পিয়ালী বেচেঁ আছে। তাঁকে যখন কাঠমান্ডু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে চিকিৎসকরা বলেন পিয়ালীর শরীর এমন ভাবেই তৈরি হয়েছে যে কম অক্সিজেনেও সে বেঁচে থাকতে পারে।
পিয়ালীকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় যে কেন নিজের জীবন বিপন্ন করে মৃত্যুর সম্মুখীন বেঁচে তিনি হয়েছিলেন তাঁর উত্তরে তিনি বলেন, তিনি নিজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে মানুষটিকে বাঁচিয়ে ছিলেন সেই পর্বত আরোহীও সুস্থ আছে । কখনোই তিনি স্বার্থপর হয়ে যেতে পারেন না। তিনি যখন দীর্ঘ সময় একা দাঁড়িয়ে ছিলেন সেই সময় তাঁর কাছে এক রাশিয়ান পর্বতারোহী আসেন এবং তিনিই নিচে গিয়ে খবর দেন পিয়ালীর অবস্থানের কথা। যার ফলে পিয়ালীকে উদ্ধার করতে পারা সম্ভব হয়।
বর্তমানে পিয়ালী এখনো ‘ফ্রস্ট বাইটে’ আক্রান্ত। ভয়ানক সেই অভিজ্ঞতা থেকে তিনি জীবনের অনেক বড় শিক্ষা নিয়েছেন। সেই শিক্ষা নিয়েই পিয়ালী এগিয়ে যেতে চান নতুন সফরে। গড়তে চান বিশ্বরেকর্ড পর্বতারোহনের জন্য।
রাহী হালদার