এর আগেই একবার মাকালু জয় করেছেন পিয়ালী বসাক৷ ২০২৩ সালে ১৭ মে তিনি সেই অভিযান করেছিলেন৷ শীতে আবহাওয়া যেমন প্রতিকূল থাকে, সেই সময় পরিস্থিতি তেমন ছিল না৷ তাই এবার শীতকালেই তিনি রওনা হচ্ছেন মাকালুর উদ্দেশে৷ এই অভিযান চলবে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত৷
পিয়ালী বসাকের কথায়, গরমে মাকালুর বেস ক্যাম্পে কিছু গ্রামের মানুষকে পেয়েছিলাম। শীতকালীন এই সময়ে সকলেই নিচে নেমে আসেন। বেস ক্যাম্প পৌঁছাতেই কোমর সমান বরফ হয়ে যাবে। সেটাতেও অনেক কষ্ট করতে হবে। কঠিন বরফের দেওয়াল ও পাথরের দেওয়াল রয়েছে। মাঝে মাঝেই ফাটল থাকে। ঝড় ও কুয়াশা এলে এক ফুট দূর পর্যন্ত দেখা যায় না। পায়ের আঙুল ও লোহার কাঁটার জোরে আমাদের উঠতে হয় পর্বতে। পিঠে ১৪ থেকে ১৫ কিলো ওজনের ভারী ব্যাগ থাকে। ট্রেকিং করতে ২৫ কিলো ওজনের ব্যাগ রাখতে হয়।
advertisement
মাকালু পর্বতের উচ্চতা আট হাজারের মিটারের বেশি৷ সেই শৃঙ্গ-সহ ছ’টি আট-হাজারি শৃঙ্গ জয় করেছেন হুগলির কানাইলাল বিদ্যামন্দিরের শিক্ষিকা পিয়ালী বসাক৷ তার মধ্যে অন্যতম এভারেস্ট, লোৎসে, ধওলাগিরি ও অন্নপূর্ণা৷ বারবার প্রতিকূল ও বিপদসঙ্কুল পরিবেশে যেতে কি ভয় লাগে না? পিয়ালীর উত্তর, পর্বতারোহণে একাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পদে পদে বিপদ থাকে পাহাড়ে।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে, কী পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে, তা নিয়ে পিয়ালি ভাবছেনই না৷ বরং অবলীলায় বলে দিচ্ছেন যে সেখানে এখন আবহাওয়া কেমন হতে পারে৷ এই পর্বতারোহীর কথায়, শীতকালে তুষারঝড় হয়৷ আবহাওয়াও প্রতিকূল থাকে। আবহাওয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকবে সেই সময়। প্রতি ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার গতিবেগে হাওয়া চলবে।
তা সত্ত্বেও তাঁর মাথায় এখন একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে৷ তা হল, কোনও মহিলা এখনও শীতকালীন সময়ে মাকালু অভিযান করেননি। তিনি বলেন, ‘‘সারা পৃথিবী থেকে দু’জন পুরুষ, একজন ইতালি ও আর একজন রাশিয়ার পর্বতারোহী এই এই সময় মাকালু শৃঙ্গ জয় করেছেন। তাঁরা দুজনেই পৃথিবী বিখ্যাত পর্বতারোহী। তাই আমিও চাই মহিলা পর্বতারোহী হয়ে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করার। আমার ইতিমধ্যেই এভারেস্ট, লোৎসে সবই ২৯ হাজার ফুটের ঊর্ধ্বে এবং সেগুলো তুষারঝড়ের মধ্যেই আমি অভিযান করে সফল হয়েছি।’’
পাহাড়ে একটা সময় ভাল আবহাওয়া পাওয়া যায়। তার মধ্যেই সামিট করে নেমে আসতে হয়। কিন্তু এর আগেও তুষার ঝড় ও প্রতিকূল আবহাওয়াতে অভিযান করে নেমে এসেছি। দু’টো পর্বত শৃঙ্গ প্রতিকূল আবহাওয়ায় বেঁচে ফিরেছি। আশা করি এই অভিজ্ঞতা জোরেই এই শীতকালীন মাকালু পর্বত শৃঙ্গ জয় করতে পারব।
এর আগের ছ’টি অভিযানের খরচ তিনি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে করেছিলেন৷ সেই ঋণের ভারে তিনি জর্জরিত৷ পিয়ালী বলেন, এর আগেও আমার ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ রয়েছে ব্যাংকে। তার মধ্যেও মানুষের সহযোগিতায় আমি একাধিক পর্বত জয় করেছি। বর্তমানে এই মাকালু জয়ের জন্য আমার বাড়ি বন্ধক দিয়ে ঋণ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় স্পনসরের জন্য যোগাযোগ করছি। আর প্রথম থেকেই মানুষ আমার পাশে আছেন। আশা করি এই পর্বত শৃঙ্গ জয়ে মানুষই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন।
