চুয়াড় বিদ্রোহের পর একে একে ধ্বংস হয়েছে তার নানা স্থাপত্য ও ভাস্কর্য। মাটির তলায় চাপা পড়ে গিয়েছে রাণী শিরোমণির মহল। তবে সম্প্রতি, উৎখননে উঠে এসেছে নানান জিনিস। খিলান থেকে দেওয়ালের গায়ে খোদিত মূর্তি এবার উদঘাটন হয়েছে সংস্কারে। যা আগামীতে পর্যটন মানচিত্রে আরও নতুন দিশা দেখাবে, আশাবাদী সকলে। মেদিনীপুরের লক্ষীবাই হিসেবে পরিচিত রাণী শিরোমণি। পারিবারিক সূত্রে রাজত্ব পেলেও কৃষকদের উপর ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তিনি এ বাংলার মহীয়সী রাণী শিরোমণি। মেদিনীপুর সদর শহর থেকে অনতি দূরে এখনও ইতিহাস বহন করে চলেছে রাণী শিরোমণির গড়। তবে, দীর্ঘ বেশ কয়েক বছর ধরেই মাটির তলায় চাপা পড়েছিল ইতিহাস। সম্প্রতি হেরিটেজ কমিশনের আওতায় খননকার্যে উঠে এসেছে একাধিক জিনিস। যা ইতিহাসবিদদের কাছে এক অনন্য রসদ। মনে করা হচ্ছে, দাঁতনের মোগলমারি এক অন্যতম প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠবে এখানে।
advertisement
অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলায় জন্ম বহু বিপ্লবীর। মেদিনীপুর জেলার শালবনী বিধানসভার অন্তর্গত কর্নগড়। এই কর্নগড়ে জন্ম হয়েছিলেন বীরাঙ্গনা রাণী শিরোমণির। যিনি ভারতবর্ষের প্রথম সশস্ত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। যিনি ছিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রথম সশস্ত্র আন্দোলন চুয়াড় বিদ্রোহের নেত্রী। হারান ইতিহাসে কান পাতলে শোনা যায় রাণী শিরোমণি মানে ‘মেদিনীপুরের লক্ষীবাই’। কেশরী বংশের রাজা ইন্দ্রকেতু রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। উত্তরসূরী রাজা অজিত সিংহের মৃত্যুর পরে রাজ্য পরিচালনার দায়িত্বভার তুলে নেন দ্বিতীয় রাণী শিরোমণি।টিলার ওপরে মাকড়া পাথর ও পোড়া ইঁটের রাজপ্রাসাদ হয়ে উঠল বিপ্লবের আঁতুড়ঘর। তবে কালের নিয়মে হারিয়ে গিয়েছে সেই স্থাপত্য। তবে হারিয়ে যাওয়া সেই গৌরবকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে প্রশাসন। রাণী শিরোমণির গড়ে শুরু হয়েছে সংস্কারের কাজ। রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের হেরিটেজ কমিশনের উদ্যোগে প্রায় ২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ হয়েছে সংস্কারের জন্য। গড়ের মাটির নিচে খনন করতে গিয়ে উঠে এসেছে একাধিক প্রাচীন খিলান, দেওয়ালে খোদাই মূর্তি, পাথরের সিঁড়ি ও মন্দিরের অন্দরভাগ।
প্রশাসনের আশা, কর্ণগড়ও শীঘ্রই মোগলমারির মতই জেলার ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। স্বাভাবিকভাবে ইতিহাসের উন্মোচন এবং পর্যটন মানচিত্রে এক নতুন দিশা হতে চলেছে এই কর্ণগড়।