তবে ক্যাম্পের যে বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তার জ্বলন্ত উদাহরণ দেখা গিয়েছে নদিয়ার শান্তিপুরের কাজী নজরুল বিদ্যাপীঠের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রের দৃষ্টি ফিরে পাওয়া । ছোটবেলা থেকেই তার চোখে সমস্যা। তবে পারিপার্শ্বিক কিছু ভ্রান্ত ধারণার কারণে ছোটবেলায় সেভাবে চোখের চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি।
advertisement
তার বাবা গরিমউদ্দিন শেখ পেশায় রাজমিস্ত্রির ঠিকা কর্মী। দুই ছেলে মেয়ের মধ্যে মেয়ে মাধ্যমিক দেয় এবং ছেলে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ে। জানা যায় গর্ভাবস্থা থেকেই তার ছেলের চোখে সমস্যা ধরা পড়ে। বাঁ চোখে পরিষ্কার দেখতে পেলেও ডান চোখে আবছা দেখতে পায় জন্মানোর পর থেকেই। যত বয়স বাড়ে ততই দিন দিন চোখের দৃশ্য আবছা হতে থাকে। চিকিৎসককে দেখালে পরে চিকিৎসক পরামর্শ দেন ছেলের চোখে ছানি রয়েছে। এরপর কল্যাণী থেকে শুরু করে বিভিন্ন কলকাতার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে সমস্ত চিকিৎসকেরাই একই পরামর্শ দেন ছানি অপারেশন করার।
তবে পারিপার্শ্বিক কিছু ভ্রান্ত ধারণার কারণে এতদিন যাবত সেই অপারেশনে বিলম্ব হয়। তার মা জানান অনেকেই নাকি তাদেরকে বলেছেন গর্ভাবস্থায় সন্তানের কোনও অসুবিধা হলে সেই রোগ সারে না। আর সেই কারণেই নিজেদের ভাগ্যকে দোষ দিয়ে এতদিন পর্যন্ত আর খুব বেশি চিকিৎসা ক্ষেত্রে এগোননি নিজের সন্তানের জন্য। যদিও তা ছাড়াও নিজের একরত্তি সন্তানের এই বয়সেই চোখের মত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কাটাছেড়া করার ভরসা পাচ্ছিলেন না তারা।
এরপর কেটে যায় বেশ কয়েক বছর। কিছুদিন আগেই ওই শিশুর স্কুলে আয়োজন করা হয় মেডিক্যাল ক্যাম্পের। সেখানে শিশুটির স্বাস্থ্যের পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা তার বাবা-মাকে বুঝিয়ে আশ্বস্ত করেন চোখের ছানি অপারেশন করার। গত সোমবার শিশুটিকে ভর্তি করানোর পরে মঙ্গলবার ডক্টর প্রদীপ দাস সফলভাবে চোখের অপারেশন করেন ওই শিশুর। আর এর পরেই আপাতত স্বাভাবিকভাবে দৃষ্টিশক্তি পুনরায় ফিরে পেয়েছে শিশুটি।
শিশুটির মা রোজিনা বিবি শেখ বলেন, “অনেকেই বলতে শুনেছি গর্ভাবস্থায় কোনও অসুখ হলে সেই রোগ নাকি সারে না। আর সেই কারণেই এতদিন পর্যন্ত আমরা এতোটুকু ছেলের চোখ অপারেশনের মত বড় সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তবে স্কুলে মেডিকেল ক্যাম্পের পরে চিকিৎসকেরা আশ্বস্ত করায় গত সোমবার আমার ছেলেকে ভর্তি করিয়ে মঙ্গলবার অপারেশন করায়। এরপর বুধবার ব্যান্ডেজ খুলে চশমা পরিয়ে দেয়। বর্তমানে আমার ছেলে ভালো আছে। সবাইকে এটুকু বলব পারিপার্শ্বিকথা শুনে আমি ভুল করেছি, কোনরকম সমস্যা হলে অন্যান্যদের কথা না শুনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই ভালো\”।
এ বিষয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন রায় বলেন, “স্কুলের আয়োজন করা এই মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোর খুবই উপকারিতা রয়েছে। এছাড়াও আরও একজন আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রী রয়েছে এই ক্যাম্পের মাধ্যমে চিকিৎসা করিয়ে বর্তমানে সে সুস্থ রয়েছে। বছরে আমাদের মেডিকেল ক্যাম্প একটা বাধ্যতামূলকভাবে করা হয় কখনও দুটোও আয়োজন করা হয়।”
মৈনাক দেবনাথ