বিশ্বাস করা হয়, এই পরিবারটি ১৬৫০ সালের কাছাকাছি সময় উত্তর ভারতের কনৌজ অঞ্চল থেকে মুঘল অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে পুরুলিয়ার এই আড়রা গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করে। তারপর এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয় মিশ্র পরিবারের বংশ। পরবর্তী সময়ে পরিবারের এক প্রখ্যাত সদস্য রাজারাম মিশ্রের উদ্যোগেই শুরু হয় দুর্গা পুজো। তার হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পায় বহু শতাব্দীপ্রাচীন মিশ্র পরিবারের এই পুজো।
advertisement
এই পুজোর রয়েছে বেশ কিছু নজিরবিহীন রীতিনীতি ও ঐতিহাসিক সংযোগ। মিশ্র পরিবারে সংরক্ষিত রয়েছে ‘রামচরিত’ ও ‘চণ্ডী’র দুটি অমূল্য পুঁথি, যা লেখা হয়েছিল হরিতকী পুড়িয়ে তৈরি করা কালি দিয়ে, সম্ভবত এক শতাব্দীরও বেশি আগে। আজও সেই পুঁথিগুলির নির্দেশনা মেনেই দুর্গা পুজোর যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়, যা এই মিশ্র পরিবারের পুজোকে আরও বেশি ঐতিহাসিক ও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
এই পুজোয় আরও এক গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এই পুজোয় দেবী দুর্গার সঙ্গে পুজিত হয় পরিবারের দুই ঐতিহাসিক \’তরোয়াল\’।
একটি তরোয়াল পরিবারের সদস্যরা কনৌজ থেকে এনেছিলেন অপরটি মিশ্র পরিবারকে উপহার দিয়েছিল পঞ্চকোট রাজবংশ। এই তরোয়ালদ্বয় দেবীর শক্তির প্রতীক হিসেবে পূজিত হয়, যা একাধারে ধর্মীয় শ্রদ্ধা ও ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন বহন করে।
আড়রা গ্রামের মিশ্র পরিবারের দুর্গাপুজো কেবলমাত্র একটি পারিবারিক পুজো নয়, এটি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ।
তিন শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে চলে আসা এই পুজো আজও তার প্রাচীনতা ও বিশিষ্টতা অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছে, যা বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের ধারায় এক অমূল্য সংযোজন।