ইতিহাসের পাতা ঘেঁটে জানা যায়, জানবাজারের বাবু রাজচন্দ্র দাসের বিধবা স্ত্রী রানি রাসমণিদেবী অন্নপূর্ণা পুজোর জন্য কাশীযাত্রার আয়োজন করেন। ২৪টি নৌকায় আত্মীয়স্বজন, দাসদাসী ও রসদ নিয়ে যাত্রা আরম্ভ করার প্রস্তুতিও সারা। জনশ্রুতি অনুসারে, রওনা হওয়ার আগেরদিন রাতে রানি দেবী মায়ের স্বপ্নাদেশ পান। মা তাঁকে বলেন, কাশী যাওয়ার প্রয়োজন নেই। গঙ্গাতীরেই একটি সুন্দর মন্দিরে আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো কর। সেই মূর্তিতে আবির্ভূত হয়েই আমি পুজো গ্রহণ করব।
advertisement
আরও পড়ুনঃ কলকাতায় বসে ফের বোমা ফাটালেন সৌমিত্র খাঁ! কনভয়ে হামলা নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ
এই স্বপ্নাদেশের পর বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে, রানী গঙ্গাতীরে জমি ক্রয় করেন এবং মন্দির নির্মাণ শুরু করেন। ১৮৪৭ সালে মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়, যা শেষ হয় ১৮৫৫ সালে। দক্ষিণেশ্বর মন্দির যেখানে তৈরি হয়েছে সেই ২০ একরের জমিটি ছিল জন হেস্টি নামে এক ইংরেজের। তাঁর কাছ থেকেই কেনা হয় জমি। লোকমুখে তখন জায়গাটি সাহেবান বাগিচা নামে পরিচিত ছিল। আদপে এটি ছিল কচ্ছপাকার সংখ্যালঘু গোরস্থান। তবে, তন্ত্রমতে স্থানটি শক্তি উপাসনার জন্য উপযুক্ত ছিল বলে বিবেচিত হয়। জানা যায়, আট বছরে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই মন্দির নির্মিত হয়।
আরও পড়ুনঃ বেতন কাঠামোয় কোনও পরিবর্তন? আজ কী হতে চলেছে নবান্নে? শোরগোল তুঙ্গে
১৮৫৫ সালের ৩১ মে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার দিন মহাসমারোহে মন্দিরে মায়ের মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু হয়। বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগণার কামারহাটি এলাকার অন্তর্গত এই বিশেষ কালী মন্দির। মন্দিরের আরাধ্যা দেবীকে ভবতারিণী কালী নামে অভিহিত করা হয়। অনেকের কাছে দক্ষিণা কালী রূপেও প্রসিদ্ধি লাভ করেন এই মা। তখন রামকুমার চট্টোপাধ্যায় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসাবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীকালে রামকুমারের মৃত্যুর পর ছোট ভাই গদাধর অর্থাৎ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসাবে স্থলাভিষিক্ত হন।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণেশ্বর মন্দিরটি নবরত্ন স্থাপত্যধারায় নির্মিত হয়েছিল। মূল মন্দিরটি তিন তলা উঁচু। উপরের দুটি তলে তার ন’টি চূড়া রয়েছে, তাই নবরত্ন মন্দির। একটি দালানের উপরই গর্ভগৃহ স্থাপিত। গর্ভগৃহে শিবের বক্ষোপরে ভবতারিণী কালীমূর্তিটি প্রতিষ্ঠিত। যা রুপোর সহস্রদল পদ্মের উপর স্থাপিত। এ ছাড়াও রয়েছে একটি নাটমন্দির। পাশাপাশি, মূল মন্দির চত্বরে বারোটি পূর্বমুখী শিবমন্দির রয়েছে।
মন্দির চত্বরের উত্তর-পূর্বে রয়েছে রাধাকান্ত মন্দির। এই মন্দিরে একটি রুপোর সিংহাসনে সাড়ে একুশ ইঞ্চির কৃষ্ণ ও ষোলো ইঞ্চির রাধামূর্তি প্রতিষ্ঠিত। যা রানী রাসমণির গৃহদেবতা রঘুুবীর বলেই দক্ষিণেশ্বরে পূজিত হন। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এই মন্দির দেশ এমনকি বিদেশের মানুষের কাছেও অতি পরিচিত। নিত্যদিন বহু মানুষ মা-কে দেখতে ও পুজো দিতে আসেন এই মন্দিরে। অন্যান্য দিনের মতোই এ দিন সকালেও মাকে পুজো দেওয়ার ভিড় লক্ষ্য করা গেল মন্দিরে। তবে মন্দির কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়, হিন্দু মতে স্নানযাত্রার তিথিটিকেই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
Rudra Narayan Roy