এবার থেকে বিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে ফেস কনফারমেশন করেই ঢুকতে হবে। বাড়ির অভিভাবকদের কাছে পৌঁছে যাবে বিদ্যালয়ে তাঁর ছেলে অথবা মেয়ের উপস্থিতি। যথা সময়ে স্কুল থেকে বেরোলেও বাবা-মায়ের কাছে পৌঁছে যাবে সেই কনফার্মেশন মেসেজ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবং ব্লকের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষাসদনে স্কুল কামাই রুখতে চালু হল অভিনব ব্যবস্থা। এখন থেকে পড়ুয়ারা বিদ্যালয়ে পৌঁছলে তাঁদের বাবা-মায়ের মোবাইলে পৌঁছে যাবে একটি এসএমএস বার্তা। এমনকি যদি কেউ স্কুলে অনুপস্থিত থাকে, তাও জানা যাবে মোবাইলেই। স্বাভাবিকভাবে স্কুল কামাই করতে পারবে না পড়ুয়ারা। কামাই করলেই ধরে নেবে বাড়ির অভিভাবকেরা।
advertisement
বিদ্যালয়ে কামাই কমাতে এবং শিক্ষকদের কাছে যথাযথ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিদ্যালয়ে বসানো হয়েছে ‘ফেস রেকগনিশন অ্যাটেনড্যান্স সিস্টেম’। পড়ুয়ারা প্রতিদিন স্কুলে এসে মেশিনের সামনে দাঁড়ালেই কিংবা তাদের আইকাড স্ক্যানার এর সামনে ধরলেই তাদের উপস্থিতি স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেকর্ড হচ্ছে এবং সেইসঙ্গে সেই তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে অভিভাবকদের কাছে। শুধু উপস্থিতি নয়, তারা কখন স্কুলে প্রবেশ করছে কিংবা কখন বেরোচ্ছে, সেটাও জানিয়ে দিচ্ছে এই স্মার্ট ব্যবস্থা। স্কুলে ঢোকার গেটেই লাগানো রয়েছে এই স্মার্ট ডিভাইস, এবং স্কুলে ঢোকার মুখে দাঁড়িয়ে স্ক্যান করে স্কুলে প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক।
জানা গিয়েছে, এখন ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। হাতে হাতে মোবাইল এসে যাওয়ার কারণে স্কুলের নাম করে সেখানে পৌঁছচ্ছে না পড়ুয়ারা। প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধান জানান, “অনেক সময় ছাত্রছাত্রীরা বাড়ি থেকে স্কুলে যাওয়ার নাম করে বেরোলেও স্কুলে না গিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। এতে শুধু শিক্ষার ক্ষতি হচ্ছে না, অভিভাবকরাও বুঝতে পারছেন না সন্তান কোথায় যাচ্ছে। তাই আমরা প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছি।”
বর্তমানে বিদ্যালয়ে ছাত্রসংখ্যা ১২০০-এর বেশি। এত বড় পরিসরে পড়ুয়াদের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং অভিভাবকদের আরও বেশি সচেতন করতে এই ডিজিটাল উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ব্যবস্থা চালু হওয়ায় খুশি অভিভাবকেরাও। তবে প্রতিটি বিদ্যালয়ে এই ধরনের ডিভাইস লাগানোর আহ্বান জানিয়েছেন অভিভাবক থেকে ওয়াকিবহালমহল।
প্রধান শিক্ষক আরও বলেন, “এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার পর অভিভাবকরাও সন্তুষ্ট। তাঁরা এখন সহজেই জানতে পারছেন তাদের সন্তান ঠিকমতো স্কুলে যাচ্ছে কি না। কেউ সময়ের আগেই স্কুল ছাড়ার চেষ্টা করলে তাও ধরা পড়ে যাচ্ছে।”
ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে উপস্থিতি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে এই ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অভিভাবকরাও। এছাড়াও এই অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষণীয় বিষয় সঙ্গীত, নৃত্য, খেলাধুলো-সহ বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক সিস্টেমও রয়েছে, যা ছাত্রছাত্রীদের ও অভিভাবকদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নিয়ে এক অভিভাবক শ্রাবণী দাস বলেন, “আগে বুঝতেই পারতাম না ছেলে ঠিকমতো স্কুলে যাচ্ছে কি না। অনেক সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে বন্ধুর বাড়ি বা অন্য কোথাও চলে যেত। এখন মোবাইলে এসএমএস এলেই নিশ্চিত হতে পারছি সে স্কুলে পৌঁছেছে। খুব ভালো উদ্যোগ এটা। আমাদের মতো কর্মরত বাবা-মায়ের কাছে এই প্রযুক্তি সত্যিই আশীর্বাদ।” তবে প্রত্যেকটি অভিভাবকদের মতামত এই ধরনের ডিভাইস প্রতিটি স্কুলেই লাগানো উচিত। তাতে প্রতিটি স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে বলে মনে করছেন।
রঞ্জন চন্দ