ভারত তথা বাংলাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে পথ দেখিয়েছে অবিভক্ত মেদিনীপুরের মাটি। মেদিনীপুরের মাটি বরাবরই স্বাধীনতাকামী। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের আঁচ দাবানলের মত ছড়িয়ে পড়ে মেদিনীপুর জুড়ে। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই আন্দোলনে যোগদান করে। এই আন্দোলনে স্বদেশী নেতারা সিদ্ধান্ত নেন ইংরেজদের থানা নিজেদের দখলে আনার। ১৯৪২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর থানা দখলের দিন ধার্য হয়। ওইদিন তমলুক মহকুমার বিভিন্ন থানা দখল করতে গিয়ে শহিদ হন বহু মানুষ। তমলুকে শহিদ হন মাতঙ্গিনী হাজরা-সহ ১২ জন। মহিষাদলে দখল অভিযানে গিয়ে শহিদ হন ১৬ জন।
advertisement
ভারত ছাড়ো আন্দোলন সমগ্র মেদিনীপুর জুড়ে ইংরেজদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে পরিণত হয়। এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয়। ফলে দিকে-দিকে ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়। এই অগাস্ট আন্দোলনের পটভূমিকায় প্রতিষ্ঠিত হয় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার, যার প্রথম সর্বাধিনায়ক ছিলেন সতীশচন্দ্র সামন্ত। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। আঞ্চলিক ইতিহাসবিদ জয়দেব মালাকার জানান, ‘৪২ এর ভারতছাড়ো আন্দোলনের পটভূমিকায় তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়। এর ৯ টি আলাদা আলাদা বিভাগ ছিল। সর্বপ্রথম সর্বাধিনায়ক ছিলেন সতীশ চন্দ্র সামন্ত। প্রায় দু’বছর তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার পরাধীন ভারতবর্ষে তমলুক মহকুমায় কার্যক্রম চালিয়ে যায়। পরে গান্ধীজীর নির্দেশে ভেঙে দেওয়া হয় এই সরকার।
পরাধীন ভারতবর্ষে প্রায় দু’বছর স্বাধীনভাবে সরকার চালানোর গৌরব অন্য কোনও জাতীয় সরকারের নেই। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল মানুষের ঐকান্তিক ইচ্ছায়। সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সরকার হয়ে উঠেছিল তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার। ২১ মাস সুষ্ঠু স্বাধীনভাবে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার কার্যকলাপ চালিয়ে যায় নেতারা। গান্ধিজীর নির্দেশে ১৯৪৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর কংগ্রেস নেতারা তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ভেঙে দেয়।