একজন বহুমুখী সমাজকর্মী হিসেবে কুসংস্কারের অন্ধকার দূর করে যুক্তির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন অবিরাম। সাপ-সহ বন্যপ্রাণ রক্ষা, বিধবা বিবাহের প্রচার বিভিন্ন সামাজিক ও পরিবেশ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত তিনি। তাঁর জীবনটা যেন সমাজের প্রতি এক নিরবচ্ছিন্ন অর্ঘ্য।
advertisement
হলদিয়ার সুতাহাটা ব্লকের অনন্তপুর গ্রামের নিবাসী, ৫২ বছর বয়সি নকুলচন্দ্র ঘাঁটি। হলদিয়ার একটি বেসরকারি শিল্প সংস্থার কারখানা কর্মী তিনি। এর পাশাপাশি তিনি জেলায় ‘স্নেক ম্যান’ হিসাবেও পরিচিত। সাহস কৌশল ও প্রখর দৃষ্টি শক্তির মাধ্যমে এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি নানান ধরনের বিষধর সাপ উদ্ধার করে তুলে দিয়েছেন বন দফতরের হাতে।
আরও পড়ুন: গুগলে কী ‘সার্চ’ করলে আপনার ‘জেল’ হতে পারে জানেন…? শুনলেই চমকাবেন ‘উত্তরে’!
তাঁর এই সাপ ধরা শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালে যুক্তিবাদী মঞ্চের কুসংস্কার বিরোধী প্রচারে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন, সেখান থেকে তিনি সাপের প্রতি তাঁর ভালবাসা খুঁজে পান। আর সাপের প্রাণরক্ষার কাজ তাঁর নেশায় পরিণত হয় ওই বছর হলদিয়া মেলায় ‘সাপের ঘরে মানুষ’ প্রদর্শনী দেখার পর থেকে।
১৯৮৬ সাল থেকে যুক্তিবাদী মঞ্চের একজন নিবেদিত প্রাণ সদস্য এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করে চলেছেন নকুলচন্দ্র। বিদ্যাসাগরের মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে তাঁর জীবনের এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হল বিধবা বিবাহের প্রচলন ও বাস্তবায়ন। ২০২০ সালের নভেম্বরে এক দুর্ঘটনায় তিনি তাঁর একমাত্র পুত্রকে হারান।
এই অপূরণীয় ক্ষতির পরও, তিনি শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে ২০২২ সালে নিজের পুত্রবধূর বিয়ে দেন। এরপর থেকে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আরও ১০ জন বিধবার বিবাহে সহায়তা করেছেন, এমনকি নিজের দুই ভাইপোর বিধবাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। তাঁর লক্ষ্য হল জীবদ্দশায় অন্তত ২৫ জন বিধবার বিবাহের ব্যবস্থা করে যাওয়া।
সাপের প্রতি নকুলচন্দ্রের ভালবাসা এবং সাপের জীবন রক্ষার কাজে তাঁর অবদানও প্রশংসার দাবি রাখে। শেষ প্রায় কুড়ি বছরে তিনি দুই মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এক হাজারেরও বেশি সাপের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। যার অধিকাংশই বিষধর। উদ্ধার করা ৮০ ভাগ সাপ তিনি বন দফতরের হাতে তুলে দিয়েছেন এবং বাকি ২০ শতাংশ নিজেই নিরাপদে ছেড়ে দিয়েছেন।
একসময় এই সব উপকূলীয় অঞ্চলে সাপের কামড়ে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটত। তার ওপর ওঝাদের অপচিকিৎসা সেই ভয়াবহতাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নকুলচন্দ্র নির্ভয়ে প্রতিরোধের ডাক দেন। সাপ উদ্ধার সহ বন্যপ্রাণ রক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন তিনি।
সৈকত শী