আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক মন্মথ দাস তাঁর ‘মেদিনীপুর চরিতাভিধান’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রথম গ্র্যাজুয়েট হলেন মধুসূদন রায়। তিনি ছিলেন পটাশপুরের বাল্যগোবিন্দপুরের জমিদার পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা জমিদার গৌরমোহন রায় এবং মাতা কুচোলা দেবী। ছোটবেলা থেকেই অসাধারণ মেধার পরিচয় দেন তিনি। মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলে পড়াশোনার সময়ই তাঁর প্রতিভা সকলের নজর কেড়ে নেয়। ১৮৫৯ সালে ১০ টাকা বৃত্তি নিয়ে এন্ট্রান্স পরীক্ষা পাশ করেন। এরপর ১৮৬৪ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এ পাশ করেন। সে বছর অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলা থেকে আর কেউ গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করতে পারেননি। ১৮৪৮ থেকে ১৮৫২ সাল পর্যন্ত তিনি হার্ডিঞ্জ বাংলা স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৮৫১ সালে বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশে ১০ মিনিটে লেখা তাঁর প্রবন্ধ ‘কুসংসর্গের ফল’ এতটাই প্রশংসিত হয় যে, পরবর্তী বছর সমাচার দর্পণ পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়।
advertisement
শুধু শিক্ষাজীবনেই নয়, সমাজ ও শিক্ষাক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন মধুসূদন রায়। গ্র্যাজুয়েশন পাশ করার পর ১৮৬৪ সালেই তিনি হুগলি জেলার বড়া হাইস্কুলে সরকারি প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন। পরে বারাসত সরকারি হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে তিনি সাবেক প্রেসিডেন্সি কলেজে আইন নিয়েও পড়াশোনা শুরু করেন। শিক্ষা উন্নয়ন ও সমাজ গঠনে তাঁর অবদান আজও স্মরণীয়। তাঁর জীবন ছিল এক নিষ্ঠাবান শিক্ষকের, যিনি নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে পুরো জেলার শিক্ষার মান বৃদ্ধি করতে চেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন : মেঘবৃষ্টির আনাগোনার খবর তাঁরই আস্তিনে! গবেষণায় সাফল্যের আকাশে বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামের মেধাবিনী
দুঃখজনকভাবে, মাত্র ২৭ বছর বয়সেই থেমে যায় এই প্রতিভাবান মানুষের জীবনযাত্রা। ১৮৬৬ সালে বাড়ি ফেরার পথে নৌকায় জ্বরে আক্রান্ত হয়ে তিনি পরলোকগমন করেন। আজও পটাশপুরের বাল্যগোবিন্দপুর গ্রামে রয়েছে তাঁর স্মৃতিচিহ্ন—ভাঙাচোরা সেই বাড়িটি, যার শুধু ইটের দেওয়ালগুলো কোনওরকমে দাঁড়িয়ে আছে। সময়ের ভারে জীর্ণ সেই মাটির বাড়িটি যেন আজও জানিয়ে দেয় এক মহামানবের গল্প, যিনি ছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার প্রথম গ্রাজুয়েট এবং শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রদূত।