শুরুটা হয় খুব ছোট উদ্যোগ থেকে। বাবা পেশায় সবজি বিক্রেতা। বাবার বাড়তি সবজি দেখেই প্রথম উদ্যোগ নেয় সে। এলাকায় কয়েকজন বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে একা থাকতে দেখে খারাপ লাগত তাঁর। কারও রান্না করার শক্তি নেই। কারও আবার বাজারে যাওয়ার মানুষ নেই। দেবাশীষ সিদ্ধান্ত নেয় নিজের মত করে কিছু করবে। বাবার বাজার থেকে ফিরে আসা বাড়তি সবজি নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দেয় তাদের কাছে। প্রথমে ভয় ছিল। কে কেমন নেবে তা বুঝতে পারছিল না। কিন্তু বৃদ্ধাদের হাসিমুখ দেখে সাহস বাড়ে তার। ধীরে ধীরে সেই ছোট উদ্যোগ বড় রূপ নিতে থাকে। বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষক তার কাজে মুগ্ধ হন। তিনিও পাশে দাঁড়ান। আবার এলাকার এক দাদাও তাঁকে নিয়মিত সহযোগিতা করতে শুরু করেন।
advertisement
তারপর শুরু হয় আরও বড় কাজ। কারও শীতবস্ত্র নেই, কেউ ঠান্ডায় কাঁপছে। নিজের জমানো টাকা দিয়ে আর সাহায্যের অর্থ দিয়ে শীতের সময় সে নিজেই শাল, সোয়েটার, কম্বল কিনে দেয় অসহায় মানুষদের। এত ছোট বয়সে এরকম বড় দায়িত্ব নেওয়ায় সবাই অবাক। দেবাশীষ নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় তার কাজের ছবি ও তথ্য পোস্ট করতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে তার এই উদ্যোগ। বন্ধুদের মধ্যে প্রশংসা বাড়তে থাকে। অনেকেই এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়ান। কেউ টাকা দেন। কেউ সবজি বা চাল-ডাল দিতে চান। এখন বন্ধুরা মিলে একসঙ্গে পৌঁছে যায় তাঁরা।
এখন দেবাশীষ দিনরাত পরীক্ষার প্রস্তুতির পাশাপাশি নিয়ম করে সামাজিক কাজও করে। নিয়ম করে সে চাল-ডাল-সবজি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। আজকের তরুণ সমাজে যেখানে অনেকেই মোবাইলে আসক্ত, সেখানে দেবাশীষের এই মানবিক উদ্যোগ সত্যিই অনুপ্রেরণার। বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও তাকে উৎসাহিত করে। এলাকার মানুষও তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। অনেকে বলে, এই বয়সে এমন মানসিকতা বিরল। সত্যিই, দেবাশীষ রায় এখন উপকূল এলাকার সাধারণ ছেলেদের কাছে এক অনুপ্রেরণা। ভবিষ্যতে কী হবে তা সময় বলবে। তবে এখনই তার এই মানবিক পথচলা সমাজে নতুন বার্তা ছড়াচ্ছে।
