পান চাষ দীর্ঘদিন ধরে জেলার গ্রামীণ অর্থনীতির অন্যতম ভরসা। বছরের এই সময়ে বাজারে প্রচুর পরিমাণে পান সরবরাহ হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে চিত্র একেবারেই ভিন্ন। পাতা নষ্ট হওয়ায় বাজারে পাতার যোগান অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। এর ফলে সরাসরি ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা, পাশাপাশি সমস্যায় পড়েছেন পাইকার ও খুচরো ব্যবসায়ীরাও।
advertisement
চাষিদের বক্তব্য, পানচাষে বিনিয়োগ অনেক বেশি। বাঁশ, খুঁটি, সার, কীটনাশক সব মিলিয়ে একেক বিঘে জমিতে প্রচুর টাকা খরচ করতে হয়। কিন্তু এবার সেই খরচ তুলতে পারার মতো অবস্থাই নেই। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, অনেকেই ধার শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ব্যাঙ্ক বা স্থানীয় মহাজনের কাছ থেকে নেওয়া ঋণের বোঝা আরও বাড়ছে। সংসার চালানোও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
সমস্যায় পড়েছেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুর ২ নম্বর ব্লকের খাড়গ্রামের চাষিরা। বহু বছর ধরে এই গ্রাম বহু পরিবার পান চাষ করেন। এবারের এই অকাল ক্ষতির প্রভাব গোটা গ্রামজুড়েই পড়েছে। প্রবীণ চাষিরা জানাচ্ছেন, আগে সময় মতো বৃষ্টি হত, কিন্তু এখন আবহাওয়ার খামখেয়ালী বেড়েই চলেছে। কখনও সময়মতো বর্ষা আসে না, আবার একবার শুরু হলে টানা বৃষ্টিপাত হয়। ফলে কখনও অতিরিক্ত ভিজে গিয়ে গোড়া নষ্ট হচ্ছে, আবার কখনও অকাল শুকনো আবহাওয়ায় চারা বাঁচানোই দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
চাষিরা বলছেন, এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে পান চাষ টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে। অনেক পরিবার ইতিমধ্যেই ভাবছেন আগামী বছর পান চাষ না করে বিকল্প ফসলের দিকে ঝুঁকবেন। তবে একাংশের মতে, পান চাষ ছেড়ে দেওয়া মানে বহু বছরের ঐতিহ্যকে ভেঙে দেওয়া। কারণ পান চাষ শুধু জীবিকার উৎস নয়, গ্রামের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের সঙ্গেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
গোড়ার ভিতরে জমে থাকা পচা গন্ধ, হলদে হয়ে যাওয়া পাতা ও নষ্ট হওয়া লতার ছবি যেন গোটা সমস্যার সাক্ষ্য দিচ্ছে। স্থানীয় বাজারে যে ঝুড়ি ভরে পান বিক্রি হত, এখন তা প্রায় অর্ধেক বা তারও কমে দাঁড়িয়েছে। ফলত চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে না পারায় দাম বাড়লেও চাষিরা লাভের মুখ দেখছেন না। স্থানীয়দের আশঙ্কা, আবহাওয়ার খামখেয়ালীপনায় শুধু পান চাষ নয়, সমগ্র গ্রামীণ অর্থনীতির উপর বিরাট প্রভাব পড়তে চলেছে। কারণ পান চাষের সঙ্গে জড়িত বহু শ্রমিক, মজুর, ব্যবসায়ী ও পরিবহণ কর্মীও ক্ষতির শিকার হবেন। ক্ষতির বোঝা থেকে কবে মুক্তি মিলবে, তা নিয়ে এখনই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।