বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপুর এলাকার বাসিন্দা সুনীতা চৌধুরী৷ ২০০০ সালে বর্ধমান ওমেন্স কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ইচ্ছা ছিল, স্নাতকোত্তর করার৷ কিন্তু গ্র্যাজুয়েশনেরই তাঁর বিয়ে দিয়ে দেয় বাড়িরলোক। পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে বিয়ে হয় তাঁর৷ কিন্তু বিয়ের কিছু বছর পরেই ঘটে ছন্দপতন, শুরু হয় অত্যাচার। এমনকি, তাঁর এক মেয়েকে ভালভাবে দেখাশোনা করল অবহেলা করা হত তার ছোট মেয়েকে।
advertisement
আরও পড়ুন: যুবনেতা ওসমান হাদির সমাধিতে শ্রদ্ধা তারেক রহমানের! তারপরেই নির্বাচন কমিশনের অফিসে
তাই অবশেষে ১৭ বছর পর ছোট মেয়েকে নিয়ে সংসার ছেড়ে ঝাড়খণ্ড থেকে ফিরে আসেন বর্ধমানে। ততদিনে মারা গেছেন মা-বাবা৷ তাই প্রথমে ছোট মেয়েকে ওঠেন দিদির বাড়িতে,সেখানেই ছিলেন তিন মাস। কিন্তু নিজে কিছু করব এই আশায় নিজেই দই বড়া তৈরি করে সাইকেল নিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।
মাইলের পর মাইলের সাইকেল চালিয়ে শুরু করেন দই বড়া বিক্রি। প্রথম প্রথম সেভাবে বিক্রি না হলেও ধীরে ধীরে বেড়েছে ব্যবসা। এখন সন্ধ্যা হলেই টাউন হলে সামনে ভিড় জমে সুনীতা দির দই বড়ার দোকানে,প্রায় অনেকের কাছেই পরিচিত মুখ তিনি।
বর্তমানে দইবড়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিক পেশেন্টদের কথা চিন্তা করে শুরু করেছেন মুগ ডালের ইডলি বিক্রি। সুনীতা বলেন, ‘‘ইচ্ছে ছিল আরও পড়াশোনা করার কিন্তু বিয়ে হয়ে যায়। শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও সুখে সংসার করার স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় কিছুদিন যেতে না যেতেই শুরু হয় সাংসারিক অশান্তি। দিনে দিনে বাড়তে থাকে অত্যাচারের মাত্রা। এই পরিস্থিতি চলে ১৭ বছর ৷ শেষপর্যন্ত ছোট মেয়েকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বর্ধমানে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই ৷ শুরু করি মেয়েকে নিয়ে বেঁচে থাকার নতুন লড়াই।’’ তিনি চান, মেয়ে যাতে মানুষের মত মানুষ হয়, সমাজের কোন কাজে লাগে৷
শূন্য থেকে শুরু করে আজ তিনি স্বাবলম্বী। দগ্ধ অতীতকে পিছনে ফেলে বর্তমান জুড়ে এখন শুধু তাঁর ছোট মেয়ের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।যে পড়াশোনা তিনি নিজে শেষ করতে পারেননি, সেই অপূর্ণ স্বপ্নকেই এখন মেয়ের চোখের তারায় দেখতে পান তিনি। আর শুধু পড়াশোনাই নয়, চান মেয়ে যাতে হয় মানুষের মত মানুষ, কাজে লাগতে পারে সমাজের।