স্থানীয়দের অভিযোগ, পার্শ্ববর্তী এলাকার একটি চক্র এই ঘটনা ঘটাচ্ছে বারবার। তবে এখানে প্রশ্ন একটাই, এভাবে কেন কেটে নেওয়া হচ্ছে পাকা ধান? গ্রামবাসীরা বলেন, পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছুজন তাদের গরুকে খাওয়ানোর জন্যই এই ধান কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে একরকম গায়ের জোড়ে! বিভিন্নভাবে তাদের বারণ করা হলেও কার কথা কে শোনে! ধান কাটা বন্ধ হচ্ছে না কোনওভাবেই। বিঘার পর বিঘা জমির ধান দিনের আলোতেই কেটে নিয়ে চম্পট দিচ্ছে তারা।
advertisement
আরও পড়ুন: দিল্লি বিস্ফোরণ কাণ্ডের মাঝেই প্রধানমন্ত্রীর ভুটান সফর! কড়া নিরাপত্তা জয়গাঁতে, মাছি গলারও জো নেই
ধান চাষি সাধন পান বলেন, “দল বেঁধে এসে গরুকে খাওয়ানোর জন্য ভাল ধান কেটে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। ধান সব পেকে গিয়েছে কিছুদিন পরেই কাটা হত, কিন্তু ওরা সব কেটে নিচ্ছে। আমার তিন বিঘা জমির ধান কেটেছে, সবমিলিয়ে কিছু না হলেও এখানে ১৫ বিঘা জমির ধান কেটে নিয়েছে। দিনের বেলাতেই দু’বার করে আসছে, আমি একদিন তাড়াও করেছিলাম ওদের। এমনিতেই এবার ধান কম হবে, তারপর কেটে নিয়েছে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি, এবার আমরা মরে যাব। আমি একজন ক্যান্সার রোগী, বছরে চারবার টাটা সেন্টার যাই চিকিৎসার জন্য, কিন্তু এবার কী করব বুঝতে পারছি না।”
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
একেই বন্যা কবলিত এলাকা এই নবগ্রাম। তবে মরশুমের ধান লাগিয়ে সামান্য আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয় এলাকার চাষিরা। চাষ থেকে উপার্জিত টাকাতেই কারও সংসার চলে, আবার অনেকের চিকিৎসার খরচ যোগানোর একমাত্র মাধ্যম এই ধান চাষ। কিন্তু কষ্ট করে ঋণ নিয়ে চাষ করা ধান চুরি হয়ে যাওয়ার ঘটনায় চাষিদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এই ঘটনা আজকের নতুন নয়। প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক ভাবে এই ঘটনা ঘটে চলেছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার কিছু মানুষকে নিয়ে একরকম ভয়ে থাকেন গ্রামবাসীরা, তাই অনেকেই প্রতিবাদ করার সাহস পাননা। তবে এই ভয়কে হাতিয়ার করেই দিনের আলোয় প্রকাশ্যে ধান লুট চালিয়ে যাচ্ছে তারা। একসঙ্গে মাঠে আসছে প্রায় ২০ থেকে ২৫ জনের একটা দল শুরু হচ্ছে ধান কাটা, তারপর কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রচুর ধান কেটে তারা পালিয়ে যাচ্ছে। গ্রামবাসীদের সবসময় মাঠে বসে থাকা সম্ভব নয়, তাই মাঠ ফাঁকা থাকলেই হচ্ছে ধান লুট। তবে নাজেহাল হয়ে এবং দীর্ঘদিনের এই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে গ্রামবাসীদের একাংশ সম্পূর্ণ ঘটনা জানিয়েছেন স্থানীয় পঞ্চায়েতে।
এই বিষয়ে নবগ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ব্রজ গোপাল ঘোষ বলেন, “গ্রামবাসীরা ঘটনাটা জানিয়েছেন। আমরা পঞ্চায়েতের তরফ থেকে এবং প্রশাসনকে জানিয়ে ব্যবস্থা নেব যাতে এই অত্যাচার বন্ধ হয়। চাষিদের কষ্টের ফসল এভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে এটা ঠিক নয়।” গ্রামবাসী সূত্রে জানা গিয়েছে, বিগত দিনে এই ঘটনার কথা তাঁরা পুলিশকেও জানিয়েছিলেন। সেসময় পুলিশের টহলদারির ফলে অত্যাচার সাময়িক কিছুটা কমেছিল। তবে আবার শুরু হয়েছে সেই একই অত্যাচার। গ্রামে কান পাতলে এখনও ধান কাটা নিয়ে শোনা যাবে অতীতের হাড় হিম করা কিছু ঘটনার কথা। তবে গ্রামবাসীরা এবার পাকাপাকি ভাবে এই সমস্যার সমাধান চাইছেন। প্রশাসনের কাছে তাঁরা সমস্যা সমাধানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে ধানের গোলা থেকে দিনের আলোয় ধান চুরির এই ঘটনা অনেকটাই অবাক করে দেওয়ার মতো।





