তিরিশের দশকে বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন নবদ্বীপ হালদার। উত্তম-সুচিত্রা অভিনীত ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ সিনেমায় তাঁর অভিনয় নজর কারে দর্শকদের। কৌতুক অভিনয় কৌশল তাঁকে নিয়ে গিয়েছিল জনপ্রিয়তার শিখরে। ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছাড়াও তিনি অভিনয় করেছেন ‘হানাবাড়ি’, ‘সোনার সংসার’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’, ‘মানিকজোড়’-এর মতো একাধিক চলচ্চিত্রে। কণ্ঠ দিয়েছেন বহু শ্রুতি নাটকে।
advertisement
১৯১১ সালে পূর্ব বর্ধমানের সবুজে ঘেরা ছোট্ট গ্রাম সোনাপলাশীতে জন্ম নবদ্বীপ হালদারের। সেখানেই কেটেছে ছোটবেলা। গ্রামে প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করে তিনি ভর্তি হন বর্ধমান মিউনিসিপাল হাইস্কুলে। বর্ধমানের রাধানগর পাড়া এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন তিনি। পরবর্তীতে তিনি কলকাতায় চলে যান, সেখানে নাট্য দলে যোগ দেন এবং অভিনয় শুরু করেন বাংলা চলচ্চিত্রে। তাঁর অভিনয় ও কণ্ঠ মন জয় করে নিয়েছিল দর্শকদের।
দুর্গাপুজো ও গাজনে প্রতিবছরই নবদ্বীপ হালদার আসতেন গ্রামের বাড়িতে। এছাড়াও বছরের অন্যান্য সময় কলকাতা থেকে বিভিন্ন নাট্যদল ও যাত্রার দল নিয়ে গ্রামে আসতেন, গ্রামীণ শিল্পীদের মধ্যে বজায় রেখেছিলেন অভিনয় চর্চার ধারাবাহিকতা।
বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই জানেন না সোনালী দিনের এই শিল্পীর কথা। সোনাপলাশীতে নবদ্বীপ হালদারের বাড়ি এখন পরিণত হয়েছে আগাছার জঙ্গলে। অনেক বছর আগেই ভেঙে পড়েছে বাড়ি। ধ্বংসস্তূপ জুড়ে শাখা প্রশাখা মেলেছে বট ও অশ্বথ। গ্রামবাসীদের দাবি কিংবদন্তি শিল্পী নবদ্বীপ হালদারের স্মৃতির উদ্দেশ্যে সংস্কার করা হোক বসতবাড়ি।
নবদ্বীপ হালদার ছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের কমেডির এক উজ্জ্বল নক্ষত্র, ‘মদন’ চরিত্রে তার অভিনয় আজও বাঙালির মুখে হাসি ফোটায়। তাঁর অভিনয় এবং অনন্য কণ্ঠস্বর যে জনপ্রিয়তা এনেছিল, সেই কথা প্রায় ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম । নবদ্বীপ হালদারের স্মৃতি বিজড়িত বসতভিটা অবহেলায় আগাছার জঙ্গলে পরিণত হলেও, সোনাপলাশির মানুষের হৃদয়ে আজও বাস করেন তিনি। তাঁরা চান শিল্পীর এই পৈত্রিক বাড়িটির সংস্কার করা হোক যাতে বর্তমান প্রজন্মও জানতে পারেন এই কিংবদন্তি অভিনেতার কথা।





