বাঁশ-বেতের তৈরি জিনিসপত্র পুজোর সময় অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ঠেকা, ডালা, কুলো, টোঁকা থেকে শুরু করে প্যান্ডেলের সাজসজ্জার সামগ্রী, সবই তৈরি হয় তাঁদের হাতের জাদুতে। উৎসবের ঠিক আগে পাইকারি বাজার থেকে আসে প্রচুর বরাত। তাই এই সময় শিল্পীদের ঘুম নেই। দিন-রাত এক করে চলছে কাজ। অন্যান্য সময়ে তেমন কাজ না থাকলেও পুজোর মরশুম যেন তাদের জীবনে প্রাণসঞ্চার করে। শিল্পী পদ্মিনি বেসরা বলেন, “সারা বছর খুব একটা কাজ মেলে না। কিন্তু পুজো এলে বাজারে আমাদের জিনিসপত্রের চাহিদা হঠাৎ বেড়ে যায়। এই সময়ে আমরা যতটা কাজ পাই, তা দিয়ে বছরের বড় একটা অংশের সংসার চলে।”
advertisement
আরও পড়ুন : দিনেদুপুরে হাতিদের দাপট, ভয়ে ছুটি দেওয়া হল স্কুলে! শাবকসহ দল ঢুকতেই আতঙ্ক চা-বাগানে
এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। মাসের পর মাস ধরে তৈরি করা বাঁশের নানান জিনিসপত্র হাটে বা পাইকারদের হাতে তুলে দিচ্ছেন শিল্পীরা। পুজোর আগমনী হাওয়া যেন তাঁদের ঘরে এনে দিয়েছে নতুন স্বপ্ন। অনেকে জানিয়েছেন, পুজোর আগে বরাত বেড়েছে আগের তুলনায়। শুধু দুর্গাপুজো নয়, আশেপাশের গ্রামগঞ্জে নানা ছোটখাটো উৎসবও পালিত হয় এই সময়ে। সেই সব অনুষ্ঠানে লাগে নতুন ঝুড়ি, কুলো ও ডালা। ফলে এই সময়ে বাঁশ শিল্পের চাহিদা আকাশছোঁয়া। গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষদের কাছে বাঁশের জিনিসপত্র এখনও জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে। রান্নাবান্না থেকে শুরু করে পুজো-পার্বণ, এমনকি বাজার- সবক্ষেত্রেই বাঁশের তৈরি উপকরণ অমূল্য।
আরও পড়ুন : আবর্জনার ভাণ্ডার থেকে শিল্পের বিস্ময়! ফেলে দেওয়া লোহার জিনিসে তৈরি দেবী দুর্গা! পাড়ি দেবে হায়দরাবাদ
বাঁশের নকশির বুননে লুকিয়ে থাকে এক বিশেষ সৌন্দর্য। শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় সে বাঁশ শুধু ব্যবহারিক জিনিস থাকে না, হয়ে ওঠে শিল্পকর্ম। বাঁশের শরীর থেকে ভেসে ওঠা একরকম মিষ্টি গন্ধ যেন মনে করিয়ে দেয় গ্রামীণ ঐতিহ্যের সৌন্দর্য। তবে শিল্পীরা চিন্তিতও বটে। প্লাস্টিক পণ্যের দৌরাত্ম্যে এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সস্তা আর টেকসইয়ের তকমা লাগিয়ে প্লাস্টিক গ্রামে গ্রামে ঢুকে পড়ছে। অনেকেই সহজলভ্যতার কারণে প্লাস্টিকের ঝুড়ি, ডালা কিনে ফেলছেন।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এতে বাঁশের শিল্প মার খাচ্ছে। কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় সেই ভরাডুবি কিছুটা সামলে ওঠে। কারণ, প্লাস্টিক যতই আসুক না কেন, পুজোর আচার-অনুষ্ঠানে বাঁশের ডালা-কুলোই শ্রেয়। সত্যিই, দুর্গাপুজো শুধু আনন্দ নয়, ক্ষুধা নিবারণের মন্ত্রও বটে। পুজোর বাজারে বরাত আসতেই জঙ্গলমহলের বাঁশ শিল্পীদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে খুশির আভা। এক বছরের কঠিন সময় কাটিয়ে এই কয়েক মাসের আয়ই যেন তাদের ঘরে ভরিয়ে দেয় লক্ষ্মীর ঝাঁপি।