ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বকালে এই বাংলায় জমিদারি ব্যবস্থার পত্তন হয়। সেই সমসাময়িক কালের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জামালপুরের চকদিঘির জমিদারদের নাম। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জমিদারি প্রথা বিলীন হয়ে গেলেও ৩৭৫ বছরেও বেশি সময়কাল ধরে চকদিঘির বাগানবাটি সেই জমিদারি ঐতিহ্যেরই সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। ১০০ বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে জমিদারদের বাগানবাটি। যার কোনায় কোনায় ছড়িয়ে রয়েছে জমিদারি রাজত্বের নানা নিদর্শন।
advertisement
ঐতিহ্য পরম্পরা মেনে এই বাগানবাটির সুবিশাল মন্দিরে প্রায় ২৯০ বছর ধরে পুজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা। জানা যায়, একদা পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় দুর্গাপজোয় এই বাগানবাটিতে আসতেন। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় তাঁর সিনেমার শ্যুটিংয়ের জন্য এই বাগানবাটিকেই বেছে নিয়েছিলেন। জমিদারি, রাজত্ব আজ আর নেই। তবে জমিদারি আভিজাত্যের গরিমায় খামতি টানতে চাননি চকদিঘি জমিদার বাড়ির উত্তরসূরিরা তাই আজও পূর্বপুরুষদের নিয়ম ও নিষ্ঠা মেনে প্রতি বছর দুর্গাপূজা করেন তারা।
এই জমিদার বংশের খ্যাতি শীর্ষে পৌছেছিল সারদাপ্রসাদ সিংহরায়ের হাত ধরে । প্রজাবৎসল জমিদার সারদাপ্রসাদ তাঁর জমিদারি এলাকার প্রভুত উন্নতি সাধনে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। শিক্ষা বিস্তারের জন্য তিনি চকদিঘিতে তৈরি করেছিলেন বিদ্যালয়। সেই বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেছিলেন স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়। বাগান বাড়ির ভিতর কাছাড়ি বাড়ির সামনেই রয়েছে দুর্গাপুজোর স্থায়ী মন্দির। মন্দিরের সঙ্গেই রয়েছে টিনের ছাউনি দেওয়া বিশাল আকার বসার জায়গা।
এতকিছুর মধ্যেও সবথেকে আশ্চর্য্যের বিষয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয়ের যাতায়াত থাকা এই সিংহরায় পরিবারের মহিলাদের এখনও পুজোয় থাকতে হয় পর্দার আড়ালেই। জানা যায় ,আগে অন্দর মহল থেকে পরিবারের মহিলারা মন্দিরে পুজোদিতে কিংবা ঠাকুর দেখতে আসার সময় তাঁদের পথের দু’পাশ আড়াল করার জন্য কাপড় টাঙানো হত।এখনও পর্যন্ত্য পুরনো সেই নিয়মমতই মহিলারা পর্দার আড়াল থেকে পুষ্পাঞ্জলি দেন।
পুজোর কটাদিন বাগানবাটির ভিতরে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার থাকে। তাই পুজোর দিনগুলিতে জমিদারি নিদর্শন পরিদর্শনে আসা মানুষজনের ভিড় দেখা যায় চকদিঘির এই বাগানবাটিতে। চকদিঘি বাগান বাটির পরিবেশে মুগ্ধ হয়েছিলেন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়। তাঁর পরিচালিত ‘ঘরে বাইরে’ সিনেমার প্রায় পুরোটারই শুটিং হয়ছিল এই বাগানবাটিতেই। এছাড়াও এই বাগানবাটিতে হয়েছে একাধিক সিনেমা শুটিং।