তবে আজকে যে দুর্গাপুজোর কথা আপনাদের বলব, সেখানে পুজো তো প্রত্যেক বছর হয়। কিন্তু এই পুজোয় দশমী আসে না সহজে। প্রতিবছর প্রতিমা নিরঞ্জন হয় না। জেলার বর্ধিষ্ণু নবখণ্ড গ্রামে এমনই নিয়ম চলে আসছে বহু বছর ধরে। এই একটি পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠেন গোটা গ্রামের মানুষ। স্থানীয়রা বলছেন, গ্রামে একটিই পুজো হয়। দেবী দুর্গা সবার উঠোন আলো করে গ্রামে আসেন। একটি মাত্র দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে গোটা গ্রাম আনন্দে মেতে ওঠে।
advertisement
আরও পড়ুনঃ পুজোয় আগে ফের আবহাওয়া পরিবর্তন? কেমন থাকবে পুরুলিয়ার পরিস্থিতি? রইল পূর্বাভাস
দামোদরের কোলঘেঁষা নবখণ্ড গ্রাম। বর্ধিষ্ণু গ্রাম এই নবখণ্ড। আর এই নবখণ্ডেই রয়েছে মাজি, চট্টোপাধ্যায় এবং খাঁ পরিবারের দেবী দুর্গা। ২০০ বছর পার হয়ে গিয়েছে দেবী আরাধনায়। তিন পরিবার মিলিয়ে হয় একটিই পুজো। কিন্তু দেবী দুর্গার নিরঞ্জন হয় না এখানে। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, দেবীর আদেশে দেবীর নিরঞ্জন হয়। দেবী দুর্গা সেবাইত পরিবারের কোনও কর্তাকে স্বপ্নাদেশ দেন। সেই স্বপ্নাদেশ পেলেই দেবীর নিরঞ্জন হয়। তবে স্বপ্নাদেশ পাওয়ার কথা তিনি সরাসরি বলতে পারেন না। স্বপ্নাদেশ পাওয়া কর্তা নানান ইঙ্গিত তুলে ধরেন প্রতিমা নিরঞ্জন নিয়ে। তারপরেই নবখণ্ডের দেবী দুর্গার নিরঞ্জন হয় ধুমধাম করে।
আরও পড়ুনঃ অস্ট্রেলিয়া থেকে কনফারেন্সে এসেছেন, ই-রিক্সায় ডুয়ার্স ঘুরলেন ২ অধ্যাপক, দেখুন ভিডিও
পরিবারের সদস্যরা আরও বলছেন, বেশ কয়েক বছর কোনও স্বপ্নাদেশ পাওয়া যায় না। পুরনো প্রতিমায় পুজো হয়। ধুমধাম করে পুজো হয় চারদিন। কিন্তু দেবী থেকে যান। তিন-চার বছরও পার হয়ে যেতে পারে এই স্বপ্নাদেশ পেতে। তারা আরও বলছেন, নবখণ্ডের দেবী দুর্গার পুজোয় সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীতে হয় ছাগবলি। তবে অষ্টমীর মাহেন্দ্রক্ষণে অষ্টমীর বলি একটু অন্য ধরণের।
মহাষ্টমীর বলিতে ব্যতিক্রম নিয়ম রয়েছে এখানে। সন্ধিপুজোয় বলির আগে খাঁ পরিবারের কোনও এক সদস্য নির্দিষ্ট পুকুর থেকে ডুবে একটি সাদা শালুক ফুল তুলে আনেন। তারপর সেটি মন্দিরে এক ছুটে নিয়ে আসতে হয়। পরে সেই সাদা শালুক ফুলের তিনটি পাপড়িতে রক্ত চন্দন মাখিয়ে রাখা হয় দেবী দুর্গার পায়ে। এরপরে সেই ফুলের পাপড়ি মাটিতে পড়লে, তবেই হয় বলিদান। বেজে ওঠে ঢাক, কাঁসর। শুরু হয় উলুধ্বনী, শাঁখ বাজানো।
গ্রামের মানুষ বলছেন সন্ধিপুজোর শেষে শুরু হয় আরতি। সেই আরতি হয় দেখার মত। স্বপ্নাদেশ না পেলে নিরঞ্জন হয় না। ফলে ১২ মাস দেবী দুর্গা থাকেন এখানে। নিত্যভোগ দেওয়া হয়। সারাবছর দেবী দুর্গার সঙ্গে থাকেন দেবী মনসা, মহাদেব ও নারায়ণ। অনেক ভক্ত মহাষ্টমীর দিন দণ্ডসেবা দেন। পুজোর সময় প্রতি সন্ধ্যায় নানা রকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
Nayan Ghosh