অবশেষে হিঙ্গলগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত পৌঁছানো গেল। পৌঁছাতেই দেখা গেল একের পর এক গ্রামবাসী গাড়ি দেখে ছুটে আসছে। ওরা হয়ত ভাবছিল আমরা ত্রাণ নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সাংবাদিক দেখে কিছুটা মন খারাপ করেই আবার রাস্তার ধারে বসে পড়ল। আগ্রহবশত এক গ্রামবাসীকে জিজ্ঞাসা করতেই সে বলে "বাড়িগুলো সব জলের তলায়। একের পর এক ইঁটভাটা নদীর বাঁধ গুলোকে দুর্বল করে ফেলেছে। একবারও খাওয়া-দাওয়া জুটছে না। ত্রাণের ও খুব একটা দেখা নেই। কি করে বাঁচবো জানি না।" ঠিকই এটাই এখন বাস্তব চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের।
advertisement
প্রশাসনের তরফে ত্রিপল ও মুড়ি দেওয়া হয়েছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। কিন্তু প্রাণের হাহাকার গোটা হিঙ্গলগঞ্জ দূরে থাকলেও বুধবারের ঝড়ের আতঙ্ক কার্যত কাটিয়ে উঠতে পারছে না হিঙ্গলগঞ্জ এর গ্রামগুলির গ্রামবাসীরা। বছর তিরিশের এক যুবক বলছেন " আয়লার ক্ষত সবে কাটিয়ে উঠেছিলাম। সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু বুধবারের দেড় ঘন্টার ঝড় সব ঝড়ের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে এই হিঙ্গলগঞ্জে।"
আস্তে আস্তে গ্রামগুলির ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করলাম। ঢুকতে ঢুকতেই দেখলাম এক ভয়ানক ছবি।পাশ দিয়েই এক বিষধর সাপ চলে গেল। তা দেখে এক গ্রামবাসী বলছেন " বাবা আমাদের এদের সঙ্গেই এখন ঘর করতে হচ্ছে।" কার্যত প্রাণের ভয় নেই একাধিক গ্রামবাসী এখন এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন। গ্রামের ভেতর যতই পড়ছি ততই যেন জলের পরিমাণ বাড়ছে। যেতে যেতে প্রায় হাঁটু সমান জলে গিয়ে পৌঁছে গেলাম। দেখলাম গ্রামগুলির একাধিক মাটির বাড়ি জলের তলায় চলে গেছে। কোনমতে টিকে রয়েছে বাসের ন্যাড়া কাঠামোটা। মাটির দেওয়ালের উপর টিন বা খড় যা ছিল তার অবশ্য এখন কোন অস্তিত্বই পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামের একাধিক টিউবয়েল এখন জলের তলায়। খাবার জল টুকু নেই এখন গ্রামে। বাধ্য হই মোটর ভ্যানে করে ১০কিলোমিটার দূর থেকে জল ভরে ভরে আনছেন গ্রামবাসীরাই। পঞ্চায়েত গুলির উপর ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন গ্রামবাসীরা। তাদের অভিযোগ, " এতগুলো দিন হয়ে গেল এখনো পর্যন্ত আমাদের কোন আশ্বাস পঞ্চায়েত দিতে পারছে না। খাবার জল খাবার কিছুই পর্যাপ্ত পরিমাণে আমরা পাচ্ছি না।" হিঙ্গলগঞ্জ এর একাধিক গ্রামের বেশিরভাগ মাটির বাড়ি টিনের বাড়ি গুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জল ঢুকে গিয়ে এমনই অবস্থা আমবয়ান চলে যাবার পাঁচ দিন বাদে এখনও রাস্তায় কাটাতে হচ্ছে গ্রামবাসীদের।
বারবার বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণ হিসেবে গ্রামবাসীরা অভিযোগ তুলছেন ইটভাটার মালিকদের উপর। বাঁধের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে ইট মালিকরা। তাতেই বাঁধ ভেঙ্গে জল ডুকছে গ্রামে। এমনই অভিযোগ তুলছেন একাধিক গ্রামবাসী। এখনও পর্যন্ত গ্রামগুলি থেকে জলই নামেনি তাই বিদ্যুৎ সংযোগ কবে আসবে সে বিষয়ে এখনই ভাবতেই চাইছে না হিঙ্গলগঞ্জ গ্রামগুলির বাসিন্দারা। যেভাবে বিদ্যুতের খুঁটি গুলি হিঙ্গলগঞ্জ এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে অন্তত ১৫ থেকে ২০ দিনের আগে বিদ্যুৎ সংযোগের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না হিঙ্গলগঞ্জ এলাকাজুড়ে। তবে প্রশাসনের তরফে বলা হয়েছে ত্রাণ,খাদ্য সামগ্রী পাঠানোর সব রকমই ব্যবস্থা করা হয়েছে হিঙ্গলগঞ্জ এলাকাজুড়ে। ফেরার পথে এক গ্রামবাসী বলেন " আপনারা খবর করে চলে যাবেন। আমাদের এইভাবে আর কদিন রাস্তায় কাটাতে হবে তা অবশ্য আমরা জানি না।"
হিঙ্গলগঞ্জ থেকে সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়