এছাড়াও এই গ্রামেরই আরও দুই পরিযায়ী শ্রমিক শম্ভুলাল কিসকু ও শীলবানী টুডু আহত হয়ে বালেশ্বরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ইতিমধ্যেই পরিবারের লোকজন রওনা দিয়েছেন তাঁদের কাছে। পরিবারের দাবি, মৃতদেহ যেন বাড়িতে নিয়ে আসা হয় সেই ব্যবস্থা করুক সরকার। মৃতের ভাই রাজেশ হেমব্রম বলেন, ‘ট্রেন দুর্ঘটনার খবর জানতে পেরে আমি দাদাকে ফোন করেছিলাম। অপরিচিত একজন দাদার পকেট থেকে ফোনটা বের করে ফোন ধরে জানায় দাদার মৃত্যু হয়েছে। আমরা চাই দাদার মৃতদেহ গ্রামে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হোক। আমাদের এলাকায় কাজ না থাকায় পরিবার ছেড়ে দাদা কেরালা যাচ্ছিল। তাই আমরা সরকারি সাহায্যের আর্জি জানাচ্ছি।’
advertisement
আরও পড়ুন: কোথায় যাত্রী সুরক্ষা? প্রতি দিন দেশে ৭২ জনের রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়! NCRB-র চাঞ্চল্যকর তথ্য
জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ভারতী হাঁসদা বলেন, ‘আমরা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। মুন্সি টুডুর মৃতদেহ গ্রামের নিয়ে আসার সমস্ত ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যে দুজন আহত হয়েছেন তাঁদেরকেও ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।’ শুক্রবার মুর্শিদাবাদের সালার থানার তালিবপুরের ৬ জন শ্রমিক কাজে যাচ্ছিলেন কেরালায়। শালিমার স্টেশন থেকে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন। দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের মধ্যে থেকে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা কতটা তা সচক্ষে অনুভব করেছেন তাঁরা, এখনও চোখে মুখে আতঙ্ক।
আরও পড়ুন: বেড়েই চলেছে মৃত্যুমিছিল! করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯৪
হঠাৎ বিকট আওয়াজ তারপর সবকিছু চুরমার, চারিদিকে আর্তনাদ। কারও হাত ভাঙা, কারও পা ভাঙা, কারও দেহ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে লুটোপুটি খাচ্ছে। কিন্তু ট্রেনের মধ্যে থেকেও ফিরে এসেছেন ৫জন। তাঁদের অভিজ্ঞতা সেই ভয়াবহ মুহুর্তের কথা জানালেন তাঁরা। রাজেশ শেখ বলেন, ‘আমি নিজের সিটেই বসেছিলাম। হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ হয়। তারপরেই জানলা দিয়ে তাকিয়ে দেখি ট্রেন লাইনের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। তারপরেই আর একটা ট্রেনের উপর আমাদের বগিটা উঠে যায়। কোনও রকমে ট্রেনের বগি থেকে বেড়িয়ে আসি। চারিদিকে শুধুই মৃতদেহ। সেই দৃশ্য আমি কোনও দিন ভুলব না।’
তবে এখনও কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি অপর এক শ্রমিকের। ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর থেকে উৎকণ্ঠায় পরিবার। ফারাক্কা ব্লকের বেওয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁকা গ্রামের প্রেমিক ঘোষ এখনও নিখোঁজ। ট্রেনে ওঠা পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন। বেঙ্গালুরু থেকে ফিরছিলেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পর থেকে প্রেমিকের আর কোনও খোঁজ পাচ্ছে না পরিবারের লোকেরা। বাবা ও মা, ছেলে কখন ফিরবে চোখের জলে সময় কাটাচ্ছেন। অপেক্ষায় রয়েছেন ছেলের বাড়ি ফিরে আসার। ফারাক্কার অর্জুনপুরের বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডল করমণ্ডলে চেন্নাইয়ে যাচ্ছিলেন রাজমিস্ত্রীর কাজে। শালিমার থেকে ট্রেনে উঠেছিলেন। ট্রেন দুর্ঘটনার মাথা ফেটে যায় তাঁর। সেই মাথা ফাটা নিয়েই কোনও রকমে বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু প্রাণে বেঁচে ফিরলেও এখনও ভুলতে পারছেন না সেই দুর্ঘটনার কথা। ট্রেন দুর্ঘটনার পর থেকে কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি ফরাক্কার বেওয়া ১নং পঞ্চায়েতের পলাশী এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর মণ্ডলের। ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন পরিবারের লোকেরা।
প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়