গত প্রায় দু’মাস ধরে টানা বৃষ্টি হয়েই চলেছে। রোদের দেখা সেভাবে না পাওয়ায় একেবারেই শুকোতে পারছে না এঁটেল মাটি। ফলে মাটির সামগ্রী শুকোতে না পেরে অর্ধেক কাজেই আটকে আছে। বসিরহাট মহকুমার সংগ্রামপুর-শিবহাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের কামারডাঙা গ্রামে প্রায় ১০০ জন মৃৎশিল্পীর বসবাস। এঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই শিল্প বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এই বছর বৃষ্টি যেন তাঁদের অস্তিত্বকেই হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। অন্যদিকে নদী থেকে মাটি আনার ক্ষেত্রেও তৈরি হয়েছে সমস্যার পাহাড়। সরকারি ছাড়পত্র না থাকায় মাটি তুলতে পারছেন না তাঁরা। বাধ্য হয়ে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। বর্তমানে এক ভ্যান মাটির দামই দাঁড়াচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। যা মৃৎশিল্পীদের কাছে অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
advertisement
আরও পড়ুন: জল যন্ত্রণায় অতিষ্ট কালনাবাসী, টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগ চরমে
বিমল চন্দ্র পাল নামে এক শিল্পী আক্ষেপ করে বলেন, নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর মত অবস্থা। লাগাতার বৃষ্টিতে সামগ্রী শুকোচ্ছে না, তাই আমরা সময় মত সরবরাহ করতে পারব কি না তা নিয়ে চিন্তায় আছি। কমলা পাল নামে এক মহিলা শিল্পী জানান, রোদই আমাদের মূল রসদ। কিন্তু এই বছর সেই রোদ নেই। সংসার চলে এই সামান্য কাজ করে, অন্য কিছু পারি না। তাই সরকারের কাছে আবেদন, আমাদের পাশে দাঁড়াক।
প্রবীণ শিল্পী শম্ভু পাল জানান, নদী থেকে মাটি আনার অনুমতি না থাকায় আমরা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হই। সরকার যদি সাহায্য করে তবে আমাদের ঐতিহ্য রক্ষা পাবে। মাটির ঘট তৈরি করা শিল্পী সঞ্জীব পালের আশা, যদি সরকারি সাহায্যে যন্ত্রচালিত চাকা কিনতে পারি, তবে উৎপাদন বাড়বে, আয়ও ভাল হবে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকেও শিল্পীদের সমস্যার কথা জানা হয়েছে। বসিরহাট-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি উত্তম সর্দার বলেন, এই এলাকার বাসিন্দারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মাটির জিনিস তৈরি করছেন। তাঁদের সমস্যার কথা শুনে আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।
আরও পড়ুন: বাংলায় কথা বলায় কটকের থানায় ৫-৬ দিন আটকে রেখে বেধড়ক মার! চিকিৎসা করাতে গিয়েছিল যুবক
এই সংঙ্কট শুধু বসিরহাট-১ ব্লকের নয়। বসিরহাট-২, গোবিন্দপুর পালপাড়া, হাড়োয়া, মিনাখাঁ, স্বরূপনগর সহ সীমান্তবর্তী ও সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকার মৃৎশিল্পীরাও একই সমস্যার মুখে পড়েছেন। সকলেরই এখন একটাই আশা, বৃষ্টি থামুক, উঠুক ঝলমলে রোদ। তাহলেই সময় মত মাল সরবরাহ করা যাবে, সংসার বাঁচবে। সেই সঙ্গে টিকে থাকবে বাংলার এই প্রাচীন ঐতিহ্য।