পাঁশকুড়ায় তাঁর আদি গ্রামেও নজর পড়েছে তদন্তকারীদের। দুর্নীতি ফাঁসের আশঙ্কায় তাই পাঁশকুড়ার এইসব এলাকার বিভিন্ন সংস্থা থেকে ফাইল সরিয়ে ফেলতে গোপনে তোড়জোর চলছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিবেশীরা। জানা গিয়েছে, তাপসের আদি বাড়ির এলাকা পাঁশকুড়ায় এক সময় চিটফান্ডের কারবারও ছিল তাপসের। প্রায় চার দশক আগে ‘মিনার্ভা ফিনান্স’ নামে চিটফান্ড খুলে তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন বলে অভিযোগ। প্রতারণায় গ্রেফতারও হন তিনি। পাঁশকুড়ার মাইশোরার হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে তাপস।
advertisement
আরও পড়ুন: 'সব অভিযোগ মিথ্যা', তথ্য সামনে এনে বউবাজার নিয়ে KMRCL-এর পাল্টা বিস্ফোরক দাবি
বাম আমলে প্রথমে সিপিআই, পরে যোগ দেন মার্ক্সসিস্ট ফরওয়ার্ড ব্লকে। আশির দশকে সেই দলের জেলা সভাপতিও হন। অভিযোগ, ওই সময়ই পাঁশকুড়া স্টেশন বাজারে 'মিনার্ভা' নামে চিটফান্ডের অফিস খোলেন তাপস। অভিযোগ, ব্যাঙ্কের থেকে বেশি টাকা ফেরতের টোপে শুরু হয় টাকা তোলা। সেই সময় রামানুজ দাস নামে স্থানীয় এক মহন্তকে সংস্থার শেয়ার হোল্ডার করেছিলেন তাপস। রামানুজ সৎ বলে পরিচিত ছিলেন এলাকায়। ফলে, তাঁর সূত্রে অনেকে তাপসের সংস্থায় টাকা রাখেন। প্রায় সাত বছর পাঁশকুড়ায় তাপসের চিটফান্ডের অফিস চলেছিল।
আরও পড়ুন: মানিকের বাড়িতে গোপন সিডি, আরও বেআইনি নিয়োগের হদিশ! হলফনামায় বিস্ফোরক তথ্য জানাল ইডি
অভিযোগ, ‘‘তাপস অন্তত ৩ কোটি টাকা বাজার থেকে তুলে গা ঢাকা দিয়েছিলেন। লগ্নিকারীরা কেউ টাকা ফেরত পাননি।’’ তবে সে সময় অভিযোগ-বিক্ষোভ কিছুই হয়নি বলে জানা গিয়েছে। তাপসকেও এলাকায় দীর্ঘ দিন দেখা যায়নি। অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে পাঁশকুড়ার বেশ কয়েক জনকে মোটা টাকার বিনিময়ে চাকরিও পাইয়ে দিয়েছিলেন তাপস। চাকরি দেওয়ার নামে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে এক বার গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি। তৃণমূল আমলে ওই 'মিনার্ভা' নামেই টিচার্স ট্রেনিং কলেজ খোলেন তাপস। ২০১৮ সালে বহরমপুর থেকে তাঁর ওই কলেজ মাইশোরা পাতন্দায় স্থানান্তরিত করেন।
জানা গিয়েছে, অনিয়মের অভিযোগে হাই কোর্টের নির্দেশে সম্প্রতি প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি খুইয়েছেন তাপসের ভ্রাতৃবধূ পারমিতা মণ্ডল। এই পারমিতার নামেই পাতন্দা গ্রামে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ রয়েছে। পারমিতার স্বামী, তাপসের ভাই বিভাস মণ্ডল সেটি দেখাশোনা করেন। ওই কলেজের পাশে তাপস টিচার্স ট্রেনিং কলেজ করেন ২০১৮ সালে। এ দিকে, পারমিতার নামের কলেজটি থেকে জাল শংসাপত্র পাওয়া যেত বলে অভিযোগ তুলেছেন সেখানকার ম্যানেজার অমর দাস।
অমরের অভিযোগ, ‘‘এই কলেজে নানা অনৈতিক কাজ হয়। টাকা দিলেই এমফিল-সহ বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষার শংসাপত্র পাওয়া যায়। শিক্ষকদের বেতনও অনিয়মিত।’’ এদিকে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে যখন সরগরম এলাকা, তখনই রাতের অন্ধকারে তাপস মণ্ডলের সংস্থা থেকে ফাইল লোপাট করার অভিযোগ তুলছেন স্থানীয়রা। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করছেন অভিযুক্ত তাপস মণ্ডলের ভাই বিভাস মণ্ডল।