ইউটিউব চ্যানেলে তিনদিন আগে আপলোড করা হয়েছিল গানটি। সেই গান নিয়েই আপাতত তোলপাড় বাংলা। কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘কারার ওই লোহ কপাট’কে যে ভাবে নিজের আঙ্গিকে গড়ে-পিঠে নিয়েছেন রহমান, তা শুনে ক্ষুব্ধ কাজী নজরুল ইসলামের গ্রাম চুরুলিয়ার বাসিন্দারা। চলছে চরম সমালোচনা। গানটি প্রত্যাহার না করলে আইন পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চুরুলিয়ার কাজী পরিবার ও নজরুল অ্যাকাডেমি।
advertisement
আরও পড়ুন: এই ৭ ছবির অফার ফিরিয়েছিলেন ক্যাটরিনা! পরে সেইগুলিই হয় ব্লকবাস্টার
কাজী পরিবারের দাবি, আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে লেখা যে গান শুনলে আজও গায়ে কাঁটা দেয় আপামর বাঙালির, যে গান জীবন্ত হয়ে ওঠে স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলি, সেই গানের সুরটাই বদলে দিয়েছেন এ আর রহমান। কবির ভাতুষ্পুত্র ও চুরুলিয়া নজরুল অ্যাকাডেমির প্রতিষ্ঠাতা কাজী রেজাউল করিম বলেন, “এই ঘটনা দুঃখজনক। আগুন নিয়ে খেলা করছেন রহমান সাহেব।”
আরও পড়ুন: অপরাজিতা-বিশ্বনাথ হেরে গেলেন রচনার কাছে! মুকুট উঠল মহারাজের মাথায়
নজরুল অ্যাকাডেমির সদস্য ও কবির নাতনি সোনালী কাজী প্রশ্ন তোলেন এই কাজটি করার আগে কারও সঙ্গে কথা বলেছিলেন উনি? অতীতে যখন মহম্মদ রফি ও অনুপ জালোটা কাজী নজরুল ইসলামের গান বা নজরুল গীতি গিয়েছিলেন তখন কল্যাণী কাজীর তত্ত্বাবধানে গেয়েছিলেন। মূল সুর পরিবর্তন হয়নি। তাই কোনও বিতর্কও হয়নি। আপামার বাঙালি সেই গানকে ভালবেসেছে এবং জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। কিন্তু রহমান সাহেব যেটা করেছেন তা অনৈতিক ও বেআইনি কাজ করেছেন। বহুদিন আগের একটা গানকে কোন অধিকারে তিনি বদলে দিতে পারেন, এটাই এখন আমাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।”
উল্লেখ্য, কাজী নজরুল ইসলাম গ্রামাফোন কোম্পানিতে পেশাদারী সংগীত জগতে প্রবেশ করেছিলেন। তার স্বদেশ প্রেম, ভক্তিমূলক, পল্লীগীতি, হাসির গান বাঙালিকে অভিভূত করেছে। আকাশবাণী চলচ্চিত্র নাট্যমঞ্চের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলে। গীতিকার ও সুরকার হিসেবে সঙ্গীত জগতের সমৃদ্ধ করেছেন নজরুল ইসলাম। বাংলা গানে ১৭ টির মতো রাগ সৃষ্টি তিনি করেছিলেন। নজরুল রচিত গানের সংখ্যা প্রায় চার হাজার। সংগীত জগতে যা বিশ্ব রেকর্ড। কবিতীর্থ চুরুলিয়ায় গেলে দেখা মিলবে কবির ব্যবহৃত গ্রামোফোন, তানপুরা ও বিভিন্ন গানের পান্ডুলিপি। কবি এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বহু স্মৃতি রয়েছে গ্রামে। কবির স্ত্রী প্রমিলা কাজী এই গ্রামেই মারা যান। কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর সমাধিস্থল রয়েছে চুরুলিয়াতে। রয়েছে নজরুল অ্যাকাডেমী। রয়েছে নজরুল গবেষণাগার। নজরুল গবেষণার সঙ্গে যারা যুক্ত তারা এই গ্রামে আসেন এবং তারা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন।
দীপক শর্মা