বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের সেই প্রবীণ আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ চিকিৎসার জন্য এই মুহূর্তে এ রাজ্যে এসেছেন৷ উত্তর চব্বিশ পরগণার ব্যারাকপুরে রয়েছেন তিনি৷ ভারতে এসেই চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি এবং তাঁতে জেলবন্দি করে রাখার চক্রান্ত নিয়ে একের পর এক বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন রবীন্দ্র বাবু৷ এমন কি, বাংলাদেশের জেলে চিন্ময়কৃষ্ণের প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি৷
advertisement
আরও পড়ুন: সীমান্তে আরও সেনা মোতায়েন, বন্ধ নৌ চলাচল! বাংলাদেশের কাছে কেন আতঙ্কের নাম আরাকান আর্মি?
বাংলাদেশের ঢাকায় প্রায় ৩৮ বছর ধরে প্র্যাক্টিস করছেন রবীন্দ্র ঘোষ৷ তিনি নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধাও৷ চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে চট্টগ্রামের জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে৷ কোনও আইনজীবী ইচ্ছে করলেও ধৃত চিন্ময়কৃষ্ণকে আইনি সহায়তা দিতে পারছেন না দেখে নিজেই চট্টগ্রাম পৌঁছন রবীন্দ্র ঘোষ৷ তাঁর অভিযোগ, জামিন দূরে থাক, জেলে চিন্ময়কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েও বার বার তাঁকে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে৷
রবীন্দ্র ঘোষের অভিযোগ, চিন্ময়কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করার জন্য প্রথমে ইনস্পেক্টর জেনারেল অফ প্রিজনস-এর অনুমতি চান তিনি৷ কিন্তু সেই অনুমতি মেলেনি৷ এর পর বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের থেকে অনুমতি নিয়ে জেলে গিয়ে চিন্ময়কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করেন তিনি৷
রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘জেলে যখন প্রথম চিন্ময়কৃষ্ণ ব্রহ্মচারীর সঙ্গে দেখা হল, তখন ওনার চোখে জল৷ আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, কেমন আছেন?’ প্রবীণ আইনজীবীর কথায়, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসই তাঁকে জানান, জেলে আরও দুই সাধুকে বন্দি করে রাখা হয়েছে৷ রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘উনি নিজের জন্য নয়, বার বার আমাকে ওই দুই সন্ন্যাসীর জামিনের বন্দোবস্ত করার কথা বলেছেন৷’ ওই আইনজীবীর অভিযোগ, জেল সুপার, অন্যান্য কর্মকর্তারা আমরা কী আলোচনা করছি সেটা রেকর্ড করছেন৷ এমন কি, ‘চিন্ময়কৃষ্ণ প্রভুর সঙ্গে আমি একটা ছবি তুলেছিলাম, সেটাও ডেপুটি জেলার এসে নিয়ে নিলেন৷ সেই ছবি আজ পর্যন্ত আমাকে দেওয়া হয়নি৷ এটা আইনের পরিপন্থী৷ কেন চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের সঙ্গে দেখা করতে আমাদের বার বার বাধা দেওয়া হচ্ছে, সেটা ভেবে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে৷’
রবীন্দ্র ঘোষ জানিয়েছেন, চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করা হয়েছে৷ তবে বাংলাদেশে ফিরে গিয়েই তিনি ফের ধৃত সন্ন্যাসীর মুক্তির জন্য লড়াই শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন রবীন্দ্র ঘোষ৷ তিনি বলেন, ‘২ জানুয়ারি আবার আদালতে হাজির হব৷ পালিয়ে আসার জন্য ভারতে আসিনি৷ আমাদের অধিকার আমরা ছাড়ব না৷ আমাদের অধিকার কীভাবে ফিরিয়ে আনতে হয়, আমরা জানি৷’
রবীন্দ্র ঘোষ নিজে একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ সোমবার বাংলাদেশে বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে৷ অন্যান্য বার ঢাকায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশ নেন রবীন্দ্র ঘোষও৷ এ বছর সরকারের থেকে কিছুই জানানো হয়নি তাঁদের৷ আক্ষেপের সুরেই রবীন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আদালতে বিচার চাইতে গেলে ভয় দেখাচ্ছে, সেখানে আর কী বিজয় দিবস পালন করতে যাব? বিজয় দিবসে স্মৃতি সৌধে যেতে পারলাম না এটা দুঃখের বিষয়৷ বিচার না পাওয়ার জন্য তো দেশ স্বাধীন করিনি৷ মুসলিমদের সঙ্গে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই আমরা স্বাধীনতার লড়াইয়ে ছিলাম৷ অন্যায়ের বিচার করতে না পারলে দেশ স্বাধীন করে কী লাভ হল?’