২০১৮ সালের ৩১আগস্ট জামালপুর থানার নবগ্রাম ময়না এলাকায় দু নং জাতীয় সড়কের ধারে গলায় দড়ি ও ওড়না জড়ানো অবস্থায় এক যুবতীর রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, যুবতীকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথায় ভারী বস্তু দিয়ে আঘাতও করা হয়।
দেহ ময়নাতদন্তে পাঠালে যুবতীর উরুতে মেহেন্দি দিয়ে লেখা বেশ কয়েকটি ফোন নম্বর ও 'করণ' বলে একটি নাম পাওয়া যায়। এরপরই মোবাইল নম্বরের সূত্র ধরে পুলিশ জানতে পারেন, যুবতীর নাম জাহানারা খাতুন (১৯) । বাড়ি বিহারের মুজাফফর জেলার মোশাহারী চক এলাহাদাদ গ্রামে। সরকারী আইনজীবি সঞ্জীব ভট্টাচার্য জানান, গ্রামেরই বাসিন্দা করণ কুমারের সঙ্গে ওই যুবতীর প্রেম ছিল। ভীনধর্মে প্রেমের সম্পর্ক মানছিল না যুবতীর পরিবার, প্রতিনিয়ত যুবতীর উপর অত্যাচার চালানো হত। এমনকি যুবতী দু'বার করণের বাড়িতে পালিয়েও যায়। যুবকের বাড়ি থেকে ফিরিয়ে এনে যুবতীকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হত বলে অভিযোগ। পরে কলকাতায় বিয়ে দেওয়ার নাম করে যুবতীকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয় যুবতীর বাবা মহঃ মোস্তোফা ও দাদা মহঃ জাহিদ।
advertisement
তদন্তে পুলিশ জানতে পারেন, রাস্তায় যুবতীকে নৃশংসভাবে খুন করে দেহ পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের নবগ্রামের ময়না এলাকার ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে ফেলে পালিয়ে যায় বাবা ও দাদা। এরপর পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। ১০ দিনের মধ্যেই মূল অভিযুক্তদের চিহ্নিত করে ফেলা হয়। তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করে তদন্তকারী অফিসাররা কলকাতার বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তরুণীর দাদা জাহিদকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে বাবা মুস্তাকের জড়িত থাকার কথাও জানা যায়। এর পর কলকাতার তিলজলা এলাকায় হানা দিয়ে মুস্তাককে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই দু’জনকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, করণ-ই জাহানারার প্রেমিক। সে ভিন ধর্মের জেনেও জাহানারা তাঁকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা মেনে নিতে পারেনি তারা, নিজেদের মেয়েকেই মেরে ফেলে!
যদিও অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবি চৌধুরী নাজমে আলম জানিয়েছেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে যাবেন। অন্যদিকে তাদের ফাঁসানো হয়েছে বলে দাবি করেন বোনকে খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত যুবতীর দাদা মহঃ জাহিদ। বর্ধমান ফাস্ট ট্রাক কোর্টের বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২,২০১ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। দীর্ঘদিন বিচার প্রক্রিয়া চলার পর অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় বিচারক সুব্রত চট্টোপাধ্যায় অভিযুক্তদের সশ্রম কারাদন্ডের নির্দেশ দেন।
Malobika Biswas