জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য, লাফিয়ে লাফিয়ে সোনার দাম বাড়, তার সঙ্গে জিএসটি যুক্ত হওয়াকেই এই অচলাবস্থার জন্য দায়ি করছেন স্বর্ন ব্যবসায়ী, কারিগর সকলেই। পুজোর পর বিয়ের মরশুম। তার জন্যও খদ্দেরের তেমন দেখা নেই। এখন পুজোর মরশুমেও এলাকা শুনশান। সব মিলিয়ে আর্থিক মন্দায় ধুঁকছে বর্ধমানের জহুরিপট্টি।
১৮৫৮ সালে কাঞ্চন নগর থেকে বর্ধমানে স্থানান্তরিত হয় বর্ধমান রাজবাড়ি। রাজবাড়ির গায়েই তৈরি হয় বাজার চাঁদনিচক। তার ঠিক পাশেই জায়গা পায় স্বর্ণ শিল্পীরা। গড়ে ওঠে জহুরিপট্টি। শুধু বর্ধমান নয়, একসময় রাঢ়বঙ্গের বড় সোনাপট্টি হয়ে ওঠে এটি। কয়েক বছর আগেও বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদের সোনা ব্যবসায়ীরা এই বাজার থেকেই অর্ডার দিয়ে সোনা, রূপোর গয়না তৈরি করে নিয়ে যেতেন।
advertisement
এক দশক আগেও এখানে দশ হাজারেরও বেশি কারিগর কাজ করতেন। মেদিনীপুর, আরামবাগ, বাঁকুড়ার কারিগররা এই বাজারে দিন রাত কাজ করতেন। এখন কাজ না থাকায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।অনেকেই বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন । এখনও আড়াই হাজার কারিগরফ রয়েছেন। কাজ না থাকায় কেউ টোটো চালিয়ে, কেউ সবজি বেচে উপার্জনের পথ খুঁজছেন।
আরও পড়ুন: ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার স্কুল শিক্ষিকার পচা গলা দেহ, ঘটনায় চাঞ্চল্য বাঁকুড়ায়
বৈশাখ মাস থেকে ভরা মরশুম শুরু হয়ে যেত বর্ধমানের জহুরিপট্টিতে। বিয়ের মরশুম শেষ হতে না হতেই পুজোর মরশুমের ব্যস্ততা শুরু হতো। এই সেদিনও তিন শিফটে কাজ হতো অনেক কারখানায়। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ঠুকঠাক শব্দে কর্মব্যস্ত থাকতো জহুরিপট্টি। এখন সেখানে দিনের বেলাতেই রাস্তা শুনশান। অনেকেই লোকসান কমাতে কারিগরদের ছাড়িয়ে দিয়েছেন। সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত বসেও বউনি করতে পারছেন না অনেক ব্যবসায়ী।
পূর্ব বর্ধমান স্বর্নকার সমিতির কর্মকর্তারা বলছেন, বাসিন্দাদের অনেকেরই হাতে এখন মুদিখানা বাজার করারও অর্থ নেই। সোনা কিনবে কোথা থেকে। একে আকাশছোঁয়া দাম, তার ওপর যোগ হচ্ছে মোটা টাকার জিএসটি। খদ্দের সব শুনে ফিরে যাচ্ছেন। দ্বিতীয় বার আর আসছেন না। অনেক কারিগর পুজোয় ছেলেমেয়েদের জামাকাপড় কিনে দিতে পারছেন না। চাল কেনার টাকাটুকুও তাদের হাতে নেই।
SARADINDU GHOSH