শুক্রবার গভীর জঙ্গল থেকে উদ্ধার হয় সুজয়ের দেহ। দুপুরেই পরিবারকে খবর দেওয়া হয়। শনিবার অন্ডাল বিমানবন্দরে সেনাবাহিনীর তরফে কফিনবন্দি দেহ নামানো হয়। পানাগড়, সিউড়ি হয়ে বিকেলে রাজনগরে পৌঁছয় জাতীয় পতাকায় মোড়া সেই কফিন। সঙ্গে ছিলেন এলিট প্যারা ৭ স্পেশাল ফোর্সের অফিসাররা।
দেহ পৌঁছতেই ভিড় জমে কুণ্ডীরা ফুটবল মাঠে। উপস্থিত ছিলেন জেলা শাসক বিধান রায়, জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ, প্রশাসনের আধিকারিকরা। সেনাবাহিনীর নিয়ম মেনে দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও জানানো হয় শেষ শ্রদ্ধা।
advertisement
জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “আমাদের জেলার এক বীর সন্তানকে হারালাম। সেনাবাহিনীর রীতিনীতি অনুযায়ী শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। আমরা প্রশাসনের তরফে পরিবারের পাশে আছি, তাঁদের সবরকম সাহায্য করা হবে।”
সুজয় ঘোষের জন্মের কিছুদিন পরেই মা মারা যান। পরবর্তীতে বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীই হয়ে ওঠেন তিন ভাইয়ের মা। সংসারের সমস্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মেজ ছেলে সুজয়। সুজয়ের দাদা মৃত্যুঞ্জয় ঘোষ বলেন, “ভাই দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে, এই গর্ব কোনোদিন ভুলব না।”
বাবা রাধেশ্যাম ঘোষও চোখের জল সামলে বলেন, “ছেলে চলে গেছে, কিন্তু ও আমাদের গর্ব।” শৈশব থেকেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার স্বপ্ন ছিল সুজয়ের। তাঁর বন্ধু দিনবন্ধু ঘোষের কথায়, “ছোট থেকেই বলত আর্মিতে যোগ দেবে। পরে প্যারা কমান্ডো হয়ে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। আজ ও নেই, বিশ্বাস করতে পারছি না।”
আরও পড়ুন- দুই গ্রামে পাগল কুকুরের তাণ্ডব! আহত ১২, এক শিশুর আঙুল ছিঁড়ে নিল কুকুর
সপ্তাহের শুরুতে জঙ্গি দমন অভিযানে গিয়ে পীরপঞ্জাল পর্বতশ্রেণির উচ্চাঞ্চলে প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়েন এলিট প্যারা ৭ স্পেশাল ফোর্সের সদস্য হাবিলদার পলাশ ঘোষ ও ল্যান্স নায়েক সুজয় ঘোষ। তুষারঝড়ে দু’জনেরই মৃত্যু হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বক্রেশ্বর মহাশ্মশানে সেনাবাহিনীর গার্ড অব অনার ও গান স্যালুটের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় শহিদ সুজয় ঘোষের শেষকৃত্য। জাতীয় পতাকায় মোড়া কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে একসুরে উচ্চারিত হয় “বীর সুজয় ঘোষ অমর থাকুন!”