ক্যান্সার নির্মূল করতে লাগে কেমো থেরাপি। এই থেরাপির ফলে অনেক সময়ই মাথার চুল উঠে যায়। ওই সময় ক্যানসার আক্রান্তদের অনেক প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়, অনেকেই চুল উঠে যাওয়ায় নিজের পরিচিতি হারানোর ভয়ে থাকেন। সেই সব আক্রান্তদের জন্য নিজের চুল দান করলেন বীরভূমের সিউড়ির ডা: শরৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায় শিশু নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা লিপিকা রুজ চক্রবর্তী। সিউড়ি সাজানোপল্লির বাসিন্দা লিপিকা দু'বছর আগে এই চুল দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু করেন। কলকাতার এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করেই তাঁদের নির্দেশ ও পদ্ধতি মেনে তিনি নিজের চুল দান করলেন সোমবার।
advertisement
আরও পড়ুন: নতুন সংসদ ভবনের মাথায় ৯৫০০ কেজির অশোক স্তম্ভ, উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
দুই বছর ধরে চুল বাড়িয়ে ১৯ ইঞ্চি চুল দান করলেন তিনি । তাঁর এই দান নিজের স্কুলের ছাত্র অভিভাবকদের পাশাপাশি শহরের কাছে একটা উদাহরণ হয়ে থাকল। যদিও তাঁর এই দানকে খুব বেশি গুরুত্ব না দিয়ে আরও উৎসাহের কাজে তাঁকে লাগাতে চান শিক্ষিকা। লিপিকা জানান, "নিজেদের সৌন্দর্য্যের জন্যই আমরা বিউটি পার্লারে গিয়ে চুল কেটে ফেলি। সেই কেটে ফেলা চুল যদি কারও কাজে লাগে তাতে ক্ষতি কী । শুধু দানের ইচ্ছা থাকতে হবে। সেটা পদ্ধতি মেনে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যে কাটার নিয়মটা জানতে হবে।" তিনি আরও বলেন , "এই সামান্য দানে যদি ক্যান্সার রোগীদের কাজে লাগে তাহলে নিজের খুব ভালো লাগবে। গত দু'বছর ধরে চুল দান করার ইচ্ছা প্রকাশের পর চুল না কেটে চুলের পরিচর্যা করেছি।"
আরও পড়ুন: একটি অটোয় সওয়ার ২৭ জন! যাত্রী গুণতে গুণতে হয়রান পুলিশ, ঝড়ের গতিতে ভাইরাল ভিডিও
তিনি আরও উচ্ছসিত কারণ, সিউড়ির যে বিউটি পার্লারে চুল কেটেছেন দানের জন্য সেই বিউটি পার্লারও তাঁর চুল কেটে দিয়েছে বিনামূল্যে। তাঁর এই দানে খুশি তাঁর ছেলে ও স্বামী। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এই ধরনের দান সবার করা উচিত কারণ, কেমো থেরাপির সময় চুল উঠে যায়। অনেকে এর পর নিজেদের ঘরবন্দি করে নেন বা অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসা বন্ধও করে দেন। এই দান মহৎ, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তাঁর স্বামী প্রণব কুমার চক্রবর্তী বলেন , " আমার স্ত্রীর এই কাজে গর্বিত আমি। এই ভাবেই যদি সমাজের আরও মেয়েরা এগিয়ে আসে তাহলে অনেক ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর ভালো ভাবে চিকিৎসা হবে। "
ছেলে অগ্নিভ চক্রবর্তী বলেন, "ক্যানসার আক্রান্তদের চুল উঠে যায় তাই আমার মা তাঁদের চুল দিয়েছেন । আমার খুব ভালো লাগছে। " অঙ্কসার্জেন ডক্টর অভিদীপ দে জানান, " ক্যানসারে কেমো দিতে দিতে ক্যানসার রোগীদের চুল উঠে যায়। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্তদের । তখন সমাজের কারণে অনেক রোগী চিকিৎসা বন্ধ করতে চান তো অনেকে ঘর থেকে বেরনো বন্ধ করে দেন। তাই তাঁদের চিকিৎসায় চুল দান সত্যিই একটি মহৎ দান। এই ভাবেই যদি সমাজের আরও মেয়েরা এগিয়ে আসেন, তবে অনেক রোগীর চিকিৎসায় সুবিধা হবে।"